অসহায় আর্তদের সেবায় যুবকরা
নিজস্ব প্রতিনিধি ,ক্যানিং -ঘড়িতে তখন রাত প্রায় দশটা।হোটেল থেকে রাতের খাবার কিনে হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন জনাদুই যুবক।জনা তিনেক ফুটপাথবাসী ক্ষুধায় কাতর হয়ে সেই মুহূর্তে ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ডে পড়ে রয়েছে রাজপথের উপর।খাবাররের আশায় চাতকের মতো তাকিয়ে।দুচোখ দিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষুধার্তের অশ্রু।এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতি দেখে দুইবন্ধু কোনকিছুই না ভেবেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া খাবার গুলি অসহায়দের পথচারী হাতে তুলে দেন।আচমকা খাবার পেয়ে আনন্দে মন ভরে যায় তাদের। তৃপ্তি করে খেয়ে আবারও রাতের অন্ধাকারে রাজপথের ফুটপাথে ঘুমিয়ে পড়ে তারা।
বিজ্ঞাপন
Our Society.. JHARKHALI SABUJ BAHINI.
শুরু হয়েছে করোনার তান্ডব। আর সেই তান্ডব আটকাতে পরের দিন সকালে সরকারি নির্দেশে শুরু হয় জনতা কার্ফু।পরবর্তী সময়ে করোনার দাপটও বাড়তে থাকে।বাড়তে থাকে অসহায় ক্ষুধার্ত ফুটপাথবাসীর সংখ্যাও। এরই মধ্যে করোনা প্রতিহত করতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে শুরু হয়ে যায় লকডাউন।বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল,বাজার হাট,দোকানপাট সহ সমস্ত কিছু।আর এই সমস্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরো সমস্যা পড়ে যায় এই সমস্ত ফুটপাথে বসবাসকারী দুঃস্থ অসহায় মানুষজন।পেটের জ্বালা বড় জ্বালা যে!
অগত্যা তিনবন্ধু সমরেশ দোলুই,জয় নস্কর,তরুন ভুঁইয়া’রা একত্রিত হয়ে ফুটপাথ বাসীদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।যেমন কথা তেমন কাজ।নিজেরাই চাঁদা দিয়ে জনতা কার্ফুর পর দিন থেকে শুরু করে। রীতীমতো বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে আসে তারা। রান্না করা খাবার পরিবেশন শুরু করেন অসহায় ফুটপাথবাসীদের মধ্যে।প্রতিদিন রাতে এমন কার্য্যপ্রণালী লোকমুখে চাউর হতেই থাকে। বাড়তে থাকে অসহায় ক্ষুধার্ত ফুটপাথ বাসীদের সংখ্যাও।রান্না করা খাবার,পানীয় জল নিয়ে প্রতিদিন রাত সাড়ে সাতটার সময় ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ড,মাতলাব্রীজ সংলগ্ন এলাকা,ক্যানিং ষ্টেশন লাগোয়া,ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে গিয়ে অসহায় দুঃস্থেদর হাতে তুলে দিচ্ছেন এইসকল যুবকরা। তিন বন্ধুর এমন মানবিক কাজে উৎসাহিত দিয়ে যোগ দিয়েছেন দীপঙ্কর মাল,সমীর পাল, সৌমিত্র পাল,দীপক মান্না,সুমন তালুকদার, সুমন হালদার,মিন্টু সাহা, সুব্রত মন্ডলরা।বর্তমানে প্রায় দেড়শো অসহায় মানুষ ধারাবাহিক ভাবে এই যুবকদের উপর নির্ভর করে পেটের ক্ষুধার্তের জ্বালা নিবারণ করছেন।
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায়ও থাকছে রকমারী মেনু।থাকছে মাছ,মাংস,ডিম কখনও বা পাঁচমিশালী সবজীর তরকারী ডাল আর সরু চালের ভাত।
অভয় সরদার,মনো মন্ডল,নবীনা নস্করদের মতো অন্যান্যরা প্রতিদিনই পেট পুরে খেয়ে যায়।
তাদের দাবী লকডাউন প্রায় একমাস ধরে চলছে বাস ট্রেন সবই বন্ধ।একটা পয়সাও আয় নেই। প্রথম দুইদিন প্রায় অনাহারেই ছিলাম। তারপর এই ছেলেপুরে না থাকলে আমরা হয়তো অনাহারেই মারা পড়তাম।তারা নিয়মিত আমাদের কে রান্না করা খাবার খাওয়াচ্ছে।
অন্যদিকে বেশ কয়েকজন অসহায় ফুটপাথ বাসীদের দাবী “ছেলেরা প্রতিদিন যে ভাবে আমাদের কে ভালোমন্দ খাওয়াচ্ছে। তাতে করে লকডাউন উঠে গেলে আমাদের কি কেউ এমন ভালোমন্দ খাওয়াবে?লকডাউন উঠে গেলে খাবোই বা কি?
তবে ফুটপাথবাসীদের এমন আশা আশাঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে এই সমস্থ মানবিক যুবকদের দাবী স্বামী বিবেকানন্দের বাণী “জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”।আমরা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে পাথেয় করে আজীবন এমন মানবসেবার কাজ চালিয়ে যাবো,চিন্তার কোন কারণ নেই।আমরা দরিদ্র আর্তসেবায় ছিলাম আছি আগামী দিনেও থাকবো। ”
0 Comments
Welcome