সুন্দরবনে নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে পূর্বাশা
নিজস্ব প্রতিনিধি | নদীর বাঁধ ভেঙে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন। ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ, গবাদিপশু। এগারো বছর আগে এই মে মাসেই আয়লা এসেছিলো। আয়লার পর একটু একটু করে আবার ঘর ঘোছাতে শুরু করেছিলো সুন্দরবনের মানুষ। মাঝে বুলবুলের ধাক্কাটাও সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু আমপানের তান্ডবে আবার ভয়ঙ্করভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লো সেখানকার দ্বীপগুলো। নদী বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন চারপাশ। এই নোনাজল একবার জমিতে ঢুকলে সাধারণ গাছপালা,চাষের জমি,পুকুরের জল পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। আয়লার পর দেখেছি, বহুবছর চাষবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। নুনের বিষ বড়ই ভয়ঙ্কর। শেষ নয়, আবার নতুন করে লড়াই শুরু হল। সুন্দরবনের মানুষকে সাপলুডো খেলতে হবে।
হাজারো সমস্যার মধ্যে পূর্বাশা এগিয়ে চলেছে গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া, ছোট মোল্লাখালি ও সাতজেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের খাদ্য সামগ্রী ও বাড়ি তৈরির সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। এই পরিকল্পনা পূর্বাশার তিন মাসের। খাদ্য, জামাকাপড় ও ছাএছাএীদের শিক্ষনসামগ্রী দিয়ে যাবে। মানব সেবাব্রতীদের সহযোগিতা নিয়ে।সাম্প্রতিক পূর্বাশার সম্পাদক উমাশঙ্কর মন্ডলকে ম্যানগ্রোভ ম্যান হিসাবে আখ্যা পেয়েছেন।
রাঙাবেলিয়ার প্রমিলা মন্ডলের গলায় শোনা গেলো সেখানজনের অসহায় ও দুর্দশার কথা, জল নেই, খাদ্য নেই, ভাঙা বাড়ী। বাচ্চা- কাচ্চা নিয়ে কি যে হবে।ভগবান ই জানে। একই করোনা ভাইরাসের জেরে আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে পূর্বাশা এখানকার মানুষের পাশে দাড়িয়েছে বিভিন্ন মানুষজনের সহযোগিতা নিয়ে।এখানকার মানুষের দুঃসাহসিকতা নিয়ে হাজার চর্চা হয় সারা বিশ্বব্যাপী। সুন্দরবনের এই সব দ্বীপের নারীরা বাঘের মুখ থেকে স্বামীদের ছিনিয়ে আনে, বাবা ছেলেকে, ছেলে বাবাকে, হিংস্র বাঘের থাবাকে উপেক্ষা করে বাঘের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনে। কখনও কখনও মা ও ছেলে একসঙ্গে মরে— হয়ে যায় বাঘের খাবার! আবার এমন ঘটনা ঘটে একই সময় বাঘ দুই জনকে এক সাথে ধরেছে।লকডাইনের মধ্যেবাঘের বাঘের পেটে গেছে। তারা এ কাজ খুব সাহসের সঙ্গে করতে পারে কারণ তারা জানে, সেখানে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
সাতজেলিয়ার সুকুমারীর সরমা রায়, রাঙাবেলিয়ার বিভিন্ন প্রকল্পের গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। তার গলায় শোনা গেলো, এই জল কমে গেলে আন্এিক আমাশা,চুলকানি ইত্যাদি হওয়ার সম্বনা প্রবল।পূর্বাশা থেকে কয়েকটা মেডিকেল ক্যাম্প করা হবে। আশ্বাস দিয়েছেন সম্পাদক উমাশঙ্কর মন্ডল। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক যা বর্তমানে প্রধান মাথাব্যথার কারণ, ঘরের মানুষ ঘরে ফিরবে কবে ও কীভাবে? ঠিকাদার-মালিক তাঁদের অনেককে কয়েক মাসের টাকা না দিয়ে ফেলে রেখে চলে গেছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো কর্মহীন অবস্থায় থেকে মৌলিক চাহিদার প্রধান উপাদান ‘খাদ্যে’র সংস্থান করতে পারছে না পরিবারের জন্য।আই সি ডি এসের কর্মী সুপ্রিয়া বাউলিয়ার গলায় শোনা গেলো আমরা স্বাস্হ্যর দিকে নজর দিয়ে মহিলাদের জন্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যাবস্থা করেছি।কারন এই সময় নোনাজলে বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে।আমফানের দাপটে নতুন করে ছাদহীন হয়েছে বহু পরিবার। সঞ্চিত খাদ্য ডুবেছে নোনা জলে। পানীয়জলের চরম সংকট দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ঘরের মানুষ ঘরে ফেরার যে ভীষণ দরকার। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের অনুদানে রেশন দোকান থেকে কোনও রকমে চাল-আটার ব্যবস্থা হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় মুষ্টিমেয় ‘দাদা’রা লকডাউনের সময়েও গরিব মানুষের অন্ন নিয়ে তাঁদের জঘন্য রাজনীতি করতে ভোলেননি। এ বলে আমার সরকার দিচ্ছে, ও বলে আমার সরকার দিচ্ছে। যার কথা না শোনা তার গালাগালি হুমকি তো উপরি পাওনা আছেই। সবমিলিয়ে পরিবেশ এবং একইসঙ্গে ভাগ্যের জাঁতাকলে পড়েছেন সুন্দরবনবাসীরা।
সুন্দরবনের মানুষ জানে ত্রাণ আসে ত্রাণ যায়,পলির মতো থিতিয়ে পড়ে আবেগ। সামনে পড়ে থাকে অনিশ্চিত জীবন জীবিকার লড়াই। সেখানে পাশে কেউ নেই, সে একা... বড় একা। পূর্বাশা আয়লার পর এক নাগাড়ে নিঃশব্দে কাজ করে চলেছে।
0 Comments
Welcome