Welcome To Sundarban TV ||সুন্দরবন টিভিতে আপনাকে স্বাগত || সুন্দরবন টিভি সুন্দরবনের মানুষের জীবন কথা

দীনমজুরের ছেলে মাধ্যমিকে ৬৭৮পেয়ে ক্যানিং মহকুমায় প্রথম ,হতে চায় আইএএস,আইপিএস

দীনমজুরের ছেলে মাধ্যমিকে ৬৭৮পেয়ে ক্যানিং মহকুমায় প্রথম ,হতে চায় আইএএস,আইপিএস

নিজস্ব প্রতিনিধি | ক্যানিং —দিন আনা দিন খাওয়া। কোন রকমে চাষের কাজ করে সংসার চলে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বাসন্তী থানার কাঁঠালবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খেড়িয়া গ্রামের  কৃষক সালাউদ্দিন সরদারের।দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার।সালাউদ্দিন বাবুর স্ত্রী শেরিফা সরদার সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব সেরে দুই ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করার চেষ্টা করতেই থাকেন।দুই ছেলের পড়াশোনা করায় খরচ নিয়ে হিমশীম খেতে হয় সরদার পরিবারের।
অবশেষে সালাউদ্দিন বাবু তাঁর স্ত্রী শেরিফার সাথে আলোচনা করে একটু বেশী উপার্জনের জন্য মাঝে মধ্যে কলকাতায় রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে কাজ করতে যেতেন।পাপাপাশি স্ত্রী শেরিফা অঙ্গনওয়াড়ীর কাজ পেয়ে যাওয়ায় একটু ভরসা পেয়ে যায় সরদার পরিবার।বড় ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করায় তার পিছনে প্রায় সমস্ত খরচ চলে যাওয়ায় ছোট ছেলে ইজাজ আহমেদ সরদারের মাধ্যমিক নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়ে যায়। কি ভাবে ছেলেদের পড়াশোনা করাবেন সেই নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায় সরদার পরিবার। পাশাপাশি এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য অন্যত্র থেকে পড়াশোনা করতে হয় ইজাজ কে।
বাসন্তী ব্লকের কুলতলির নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির থেকে সাত বিষয়ে লেটার সহ সর্বোচ্চ ৬৭৮ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম এমনকি ক্যানিং মহকুমা এলাকার সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দীনমজুর পরিবারের ছেলে ইজাজ আহমেদ সরদার।প্রতিটি বিষয়ে ইজাজ আহমেদ সরদার পেয়েছে বাংলায় ৯৫,ইংরাজী ৯৫,গণিত ১০০,ভৌতবিঞ্জান ৯৮,জীবনবিঞ্জান ৯৬,ইতিহাস ৯৬,ভূগোল ৯৮।

নিজের বিদ্যালয়ের ছাত্র ইজাজের এর এমন অভাবনীয় সাফল্যে খুশি হয়ে বাসন্তী ব্লকের কুলতলি নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার কর। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন “ইজাজ পঞ্চম শ্রেণী থেকে  পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। প্রতি ক্লাসে প্রথম হওয়াই ছিল তার চ্যালেঞ্জ। মাধ্যমিক এত ভালো ফল করবে আশা ছিল  না,পাশাপাশি ক্যানিং মহকুমা এলাকায় সর্বোচ্চ নম্বর পাবে তেমনটা ও আশা ভরসা ছিলোনা। ইজাজের সাফল্যে আমরা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা আনন্দিত এবং গর্বিত”।
 ইজাজ জানিয়েছে “আগামী দিনে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বড় হয়ে সে আইএএস কিংবা আইপিএস হয়ে গ্রামের দরিদ্র দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়।পাশাপাশি ইজাজ জানিয়েছে সবসময় বাসন্তী ব্লক রাজনৈতিক দাঙ্গায় জর্জরিত।এমনকি তার টেষ্ট পরীক্ষার সময় এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তেজিত হয়ে উঠলে অন্যত্র গিয়ে আতঙ্কের মধ্যে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এমনটা না হলে মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতে নাম তুলতে পারতাম। আগামী দিনে আইপিএস কিংবা আইএএস হয়ে সাধাণ মানুষের কাজে নিয়োজিত করে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।”
অন্যদিকে দরিদ্র দিনমজুর সালাউদ্দিন  ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা সরদার পড়েছেন মহা ফাঁপরে।ছোট ছেলেকে বিঞ্জান শাখায় ভর্তি করতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন!কোথায় পাবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় রাতে ঘুম উবে গিয়ে ছেলের মাধ্যমিকে ভালো ফল করায় আনন্দের কথাটা ভুলেই গিয়েছেন!

Post a Comment

0 Comments