Welcome To Sundarban TV ||সুন্দরবন টিভিতে আপনাকে স্বাগত || সুন্দরবন টিভি সুন্দরবনের মানুষের জীবন কথা

ম্যানগ্রোভ রোপনের অভিনবত্বের ছোঁয়া

ম্যানগ্রোভ রোপনের অভিনবত্বের ছোঁয়া

বিশেষ প্রতিনিধি  | গোসাবা

 “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো”।
প্রকৃতির শক্তিকে মানুষ যে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে পৃথিবীকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে রবীন্দ্রনাথ সে কথাও বলে গিয়েছিলেন, অথচ এ ভারসাম্যের ব্যাঘাতের জন্যই আজ বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, এই জলবায়ু পরিবর্তন আজ বিশ্ব-সমস্যা। জলবায়ুর এই অসম পরিবর্তন ও বিষ-উষ্ণতা যদি না ঠেকানো যায় তবে হয়ত আর অল্প কিছু কালের মাঝেই এ ধরিত্রী বাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
আমরা এখন  সেই আকুল শ্রাবণ নেই, তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিনে দিনে, শীতকালে হচ্ছে অকাল বৃষ্টি, শরতের সেই মনোহর রূপ আজ উধাও হতে যাচ্ছে। মানুষের অপরিসীম লোভ প্রকৃতিকে করে তুলেছে ভারসাম্যহীন। নির্বিচারে বন উজাড়, গাছ কাটা, ব্যাপকহারে নগরায়ন ও শিল্পায়ন ও এর উদ্ভূত বিরূপ উপজাত- বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন পরিবেশের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বনবাণীর ‘বৃক্ষবন্দনা’ পরিবেশবাদী চিন্তাবিদদের কাছে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা; কারণ গাছ রক্ষা বর্তমান পরিবেশবাদীদের কাছে অন্যতম প্রধান বিষয়। একদিকে গাছ আমরা নির্বিচারে নিধন করছি; আবার বলছি এই গাছকে রক্ষা করতে হবে আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আশ্রয় নেন গাছের কাছে তার সংগীতময় উৎসবে: “বৃক্ষবন্দনা”
…বাণীশূন্য ছিল একদিন
জলস্থল শূন্যতল, ঋতুর উৎসবমন্ত্রহীন–
শাখায় রচিলে তব সংগীতের আদিম আশ্রয়,
যে গানে চঞ্চল বায়ু নিজের লভিল পরিচয়,…
প্রতিটা প্রকৃতির রোষে, প্রতিটা ভয়াবহ দুর্যোগে সেই কথাটাই যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ‘অতি-উন্নত’ আবার ‘অতি-নির্বোধ’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব মানুষ । যাঁরা নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেরাই একটু একটু করে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে ।তবু প্রকৃতি-মা নিরলস তার কাজে, তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় । আজও গাছের শিকড়ে ভূমিক্ষয় আটকে, নদীর বুকে বন্যাকে ধারণ করে, ম্যানগ্রোভের আড়ালে সাইক্লোনকে যথাসাধ্য লুকিয়ে ফেলে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে আমাদের । সম্প্রতি সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে আমাদের । সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ না থাকলে কোন ধ্বংসলীলা চাক্ষুস করতে হত মানবজাতিকে । ১৮০-১৮৫ কিমি গতিতে সুন্দরবনে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় বেগ কমিয়ে নেমে এল ১২০-১৩০-এ । কিন্তু সেই ম্যানগ্রোভই আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি । পরিবেশবিদরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের অতন্ত্র প্রহরী ম্যানগ্রোভ।

কারণ? কারণটা অবশ্যই আমরা নিজেরাই । আমরাই অতিরিক্ত মাত্রায় এসি, ফ্রিজ ব্যবহার করেছি, ফুটো করে দিয়েছি পৃথিবীর রক্ষক ওজন স্তরকে । যে স্তর অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকে দেয় । আমরাই গ্রিন হাউজ এফেক্ট তৈরি করেছি । গরম হয়ে গিয়েছে এই সৌরমণ্ডলের একমাত্র বাসযোগ্য এই গ্রহ । বরফ গলেছে হিমবাহের । জলস্তর বেড়েই চলেছে একটু একটু করে । আর সমুদ্রের সেই বেড়ে যাওয়া জলস্তরই অসনী সংকেত দিচ্ছে ম্যানগ্রোভকে ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রতি বছর সমুদ্রের জলস্তর ৩.৫-৪ মিলি মিটার করে বাড়ছে । সেটা যদি বছরে ৬ মিলি মিটারের কাছাকাছি চলে আসে তা হলেই বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে ম্যানগ্রোভের । কারণ ওই পরিমাণ জলের মধ্যে নতুন গাছ আর জন্ম নিতে পারবে না ।ম্যানগ্রোভকে সারা পৃথিবীর উপকূলের রক্ষাকর্তা বলা হয় । পাশাপাশি, জৈব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এর অবদান অসামান্য । বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কার্বোন নির্গমনে এখনই লাগাম না টানা যায় তা হলে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে । তখন আর কিছুই করার থাকবে না ।রাজন্যার মা পৌলমি সরকার অনুভূতি প্রকাশ "অনেক অনেক ধন্যবাদ। এত সুন্দর করে মেয়ের জন্মদিন পালন করার জন্য। এত দূরে থাকা কাছের মানুষদের শুভকামনা আমার মেয়ের চলার পথে পাথেয় হোক ।চোখে জল এসে গেল। ও যেন বড় হয়ে এমন করে বা আরো বেশি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা পায় এই আশীর্বাদ করো।"

সুন্দরবনের ভূমিপুত্র ও পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি উমাশঙ্কর মন্ডল বলেন, সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভের প্রতি আরো যত্নশীল ও মমত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য এটি একটি পদক্ষেপ। বৃক্ষদেবী সন্তুষ্ট হলেন।
পরিবেশ সচেতনত ব্যক্তিরা সারাজীবন স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্যে এগিয়ে আসতে পারেন।
কবির ভাষায় "দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,…"
পূর্বাশার ম্যানগ্রোভ নার্সারি তিনটি ভাবে বিভক্ত দলঃ-
অরণ্যানী কৃষ্ণা মন্ডল/একাদশী শীল/ প্রীতিলতা মন্ডল/অনিতা মন্ডল / বিনোদিনী বিশ্বাস/তনুশ্রী মিস্এী/লক্ষী মিস্তিরি /মিনতি মন্ডল/সুপ্রিয়া মিস্তিরি /বীনা মন্ডল।
অরণ্যময়ী গ্রুপ সবিতা রায়/ রেনু কয়াল/অনামিকা রায়/ জ্যােংস্না মন্ডল / পম্পা মন্ডল/সাথী মন্ডল/ হাসি গায়েন/ মিনা গায়েন/ নন্দিনী ঘরামি/ রীতা মিস্তিরি।
অরণ্যেদূতি গ্রুপ সুতপা মন্ডল/ সুষমা ভঞ্জ/ জয়িতা মিস্তিরি / গীতা বৈষ্ণব / মঞ্জুশ্রী পাইক/দোলন মন্ডল/বুলটি মন্ডল/শ্যামলী শীল/ সুজাতা মন্ডল।
পূর্বাশার এই মায়েরা নতুন ভাবে পথ দেখাবে। ওরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

Post a Comment

0 Comments