Welcome To Sundarban TV ||সুন্দরবন টিভিতে আপনাকে স্বাগত || সুন্দরবন টিভি সুন্দরবনের মানুষের জীবন কথা

থার্ড ডিভিশন থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক এ স্টার মার্কস পেল অনিমেষ


থার্ড ডিভিশন থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক এ স্টার মার্কস পেল অনিমেষ


পাঠকের চিঠি লিখেছেনঃ সৌমিত্র মণ্ডল, বালি - গোসাবা

সালটা 2018, মাধ্যমিক পরীক্ষার মাসখানি পূর্বে এক আত্নীয় মারফত পরিচয় হল অনিমেষ এর বাবা তপন বাবুর সাথে । আমি তখন মন্মথপুর হাই স্কুলে সান্মানিক শিক্ষকতা করার পাশাপাশি 2014 সাল থেকে বিনামূল্যে টিউশন পড়াতে থাকি দু:স্থ এবং দু:স্থ নয় এমন মেধা বা মোটামুটি মেধা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের। অনিমেষ ছিল কচুখালির পার্শ্ববর্তী দ্বীপ তারানগর সরস্বতী হাইস্কুলের ছাত্র। প্রথমে অনিমেষ কে পড়াতে রাজী ছিলাম না। পরে আমার আত্নীয়ের অনুরোধে রাজী হলাম। সময় গড়িয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা পেরিয়ে রেজাল্ট বেরোল। ঐ স্কুল থেকে কেউই মাধ্যমিক-এ ফাস্ট ডিভিশন পেলো না। এমনকি অনিমেষ ঐ স্কুলের প্রথম সারীর ছাত্র হয়েও মাধ্যমিক এ পেল মাত্র 259 (থার্ড ডিভিশন)। চিন্তায় চিন্তায় ভেঙে পড়লো অনিমেষ। বাবা, মা, আত্নীয় তথা প্রতিবেশী দের থেকে তীব্র ভর্ষনার শিকার হল। অনিমেষ এর বাবা-মা একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যে- অনিমেষ কে আর পড়াবে না। অসহায় অনিমেষ কয়েক দিন অন্যের বাড়িতে মাঠে মাঠে কাজ করলো নিজে পড়বে বলে। তারপর আবারও শরনাপন্ন হল আমার। আমি ওর বাবা তপন বাবু ও মা অনিমা দেবী কে বুঝিয়ে এবার ভর্তি করলাম নিজের স্কুলে। স্কুলের অধিকাংশ ছুটির দিনে অনিমেষ আমার রূম মেট। প্রতি নিয়ত কাউন্সেলিং এর পাশাপাশি পূর্বের কয়েক জন ছাত্র -ছাত্রীর মত অনিমেষ এর ভালো রেজাল্ট এর চ্যালেঞ্জটা গ্ৰহন করলাম। দিতে থাকলাম আমার নিজের তৈরি স্টাডি মেটেরিয়াল, বিভিন্ন রেফারেন্স বুক ও উত্তর লেখার ধরন সম্পর্কে সম্যক ধারণা। অনিমেষ ধীরে ধীরে যেন পড়াশুনার  মূল স্রোতে ফিরে আসতে লাগলো। আর আমি কখন যে ওর স্যার থেকে দাদা হয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। এমতাবস্থায় স্কুলে নতুন সরকারী শিক্ষক আশায় আমার সান্মানিক শিক্ষকতা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো। আবারও ভেঙে পড়লো অনিমেষ। চিন্তিত ওর বাবা- মাও, আমার অন্যান্য শুভানুধ্যায়ী অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মত। তাই স্কুল ছাড়ার পর আবারও যেতে থাকলাম বিনামূল্যে টিউশন পড়াতে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি অনিমেষেরও। শুধু আমি নিজে যে কষ্ট করে ওদের পড়াতে গেছি তাই নয়। অনিমেষও কখনো কখনো অন্যান্য কয়েক জনের মত নিজের পড়াশুনার অসুবিধায় ছুটে গেছে নরেন্দ্রপুরে আমার ভাড়া ঘরে। আর এখনতো কচুখালি গিলেই আমার রাত্রি নিবাস হল অনিমেষ এর বাড়ি(অধিকাংশ সময় -ই)। এভাবেই দেখতে দেখতে 2 বছর কেটে গেল । এল বহু প্রতিক্ষিত অনিমেষ এর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর আগেই অনিমেষ খুব ভয় পাচ্ছিল। তাই নিজে পরীক্ষার একদিন পূর্বেই পৌঁছে গেছিলাম অনিমেষ এর বাড়ি। প্রথম ২ টি পরীক্ষায় ওর সাথে থেকে প্রতিটি মুহুর্তে পজিটিভ কথা বলে ওর সাহস যুগিয়ে চলেছিলাম। তারপর নিজের প্রয়োজন এ ফিরেও এলাম। আরও দুটি পরীক্ষাও হল। যেকটি পরীক্ষা অনিমেষ দিয়েছিল ইংরেজি বাদে বাকি পরীক্ষা গুলোতে অনিমেষ লেটার মার্কস পেয়েছে। অনিমেষ এর সর্বমোট নম্বর 381 (স্টার মার্কস) । যা স্কুলের মধ্যে দ্বিতীয়। এখন পাড়া প্রতিবেশি থেকে সকল আত্নীয় এমনকি আমিও ভীষণ খুশি। অর্থাভাবে অনিমেষ আপাতত কুমীরমারী নদীবাঁধ মেরামতিতে মাটি কাটা গাড়ির হেল্পার হিসাবে কাজ করছে । যদি এভাবে হলেও কিছুটা অর্থ সে জোগাড় করতে পারে নিজের কলেজ ভর্তির জন্য। তপন বাবু ও অনিমা দেবী দুজনেরই অর্থাভাবে স্কুলের মুখ দেখা হয়নি। কিন্তু এখন দুজনেরই ইচ্ছা অনিমেষ কে আরও উচ্চ শিক্ষিত করা। আমি অতীতের মতো আজও চাই অনিমেষ আরও উচ্চ শিক্ষা লাভ করুক। ব্যাতিক্রমী মানুষ হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। আপনারাও আশাকরি তাই চাইবেন।

Post a Comment

0 Comments