Welcome To Sundarban TV ||সুন্দরবন টিভিতে আপনাকে স্বাগত || সুন্দরবন টিভি সুন্দরবনের মানুষের জীবন কথা

সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মৎস্যজীবীর

সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মৎস্যজীবীর


গোসাবা | সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর।মৃতের নাম বাবুরাম রপ্তান(৩২)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহষ্পতিবার সকালে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝিলা রেঞ্জের অন্তর্গত চিলমারী খাল এলাকায়।মৃত মৎস্যজীবীর বাড়ী গোসাবা ব্লকের কুমীরমারি  গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমীরমারি গ্রামে। স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে অভাবের তাড়নায় প্রায় প্রতিদিন সুন্দরবন জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে যেতেন মৎস্যজীবি বাবুরাম রপ্তান ও তার সঙ্গীসাথীরা।ফিরেও আসতেন। অন্যান্য দিনের মতো প্রতিবেশী কেনা মন্ডল  কে সঙ্গে নিয়ে নৌকা বেয়ে এদিন ভোরে  সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি জঙ্গল লাগোয়া চিলমারী খালে মাছ কাঁকড়া ধরতে যায়।
এদিন সকাল নটা নাগাদ দুজনেই আপন মনে সুন্দরবনের চিলমারী খালে মাছ কাঁকড়া ধরছিলেন।  ঠিক সেই মুহূর্তে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আসে।লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবুরামের উপর।মুহূর্তে তার ঘাড়ে কামড় দিয়ে পিঠে তুলে নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নদীর জলে পড়ে যায় বাঘ।সঙ্গীকে চোখের সামনে বাঘ আক্রমণ করেছে দেখতে পেয়ে সঙ্গী কেনা মন্ডল  নৌকার হাল আর কাঁকড়া ধরার শিক দিয়ে বাঘের সঙ্গে তুমূল লড়াই শুরু করে সঙ্গী কে বাঁচানোর জন্য।দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ মিনিট লড়াইয়ে আচমকা বাঘের চোখে কাদা ছিটিয়ে দেয় কেনা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাঘ ভায়া রণে ভঙ্গ দেয়।  শিকার ছেড়ে প্রাণ ভয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে পালিয়েও যায়। এরপর কোন রকমে বাবুরাম কে নৌকায় তোলে কেনা।সঙ্গী কে বাঁচানোর জন্য তড়িঘড়ি নৌকার বৈঠা বেয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দীর্ঘ পথ নৌকা বেয়ে গ্রামে আসার আগেই নৌকায় মৃত্যু হয় বাবুরামের।অবশেষে দীর্ঘপথ নদীপথ অতিক্রম করে বাবুরামের মৃতদেহ নিয়ে কুমীরমারি গ্রামে ফেরেন সঙ্গী কেনা মন্ডল। গ্রামের বাড়ীতে  মৃতদেহ পৌঁছাতেই গ্রামের মানুষজন শোকে বিহ্বল্য হয়ে পড়েন।অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়ে মৃত মৎস্যজীবীর বিধবা মা কালিদাসী,স্ত্রী কাঞ্চন ও একমাত্র পুত্র সাগর রপ্তান।
মৃত মৎস্যজীবীর সঙ্গী কেনা মন্ডল বলেন “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঘের সাথে একা লড়াই করে সঙ্গী কে ফিরিয়ে আনতে পারলেও প্রাণে বাঁচাতে না পারার আপেক্ষ সারাজীবন রয়েই যাবে। ”
উল্লেখ্য গত ২০ এপ্রিল সুন্দরবন জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন জেমসপুরের বাসিন্দা রথীন সরকার। তাঁকে নৌকা থেকে বাঘে তুলে নিয়ে যায়।২৭ এপ্রিল সুন্দরবন জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায় ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা নবীন সরকার। ২৯ এপ্রিল সুন্দরবনের ঝিলা ৫ নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই মৃত্যু হয় গোসাবা ব্লকের লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরীর বাসিন্দা সুজিত মন্ডলের।১৩ জুন কুলতলির দেউলবাড়ির গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের চারজন মৎস্যজীবী সুন্দরবনের চিতুরি জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে গিয়েছিলেন মাছকাঁকড়া ধরতে। সেখানে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় গোষ্ঠ নাইয়ার। ১৯ জুলাই কুলতলি থানার প্রত্যন্ত গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর কৈখালি গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল সরদার সুন্দরবন জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যায়। ২৮ জুলাই কুমীরমারী গ্রামের ধরণী মন্ডলের মৃত্যু হয় বাঘের আক্রমণে।২ আগষ্ট গোসাবা ব্লকের লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুশান্ত মন্ডল ওরফে রাঙা(৫৬) মৃত্যু হয় বাঘের আক্রমণে।অন্যদিকে ১২ আগষ্ট গোসাবার বালি ২ গ্রামপঞ্চায়েতের বালি ৯ নম্বর গ্রামে বাসিন্দা হরিপদ মন্ডল(৪৫) সুন্দরবন জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়।

 বনদফতর সুত্রে জানাগেছে মৎস্যজীবীদের বৈধ কোন অনুমতি পত্র ছিলো না।তা স্বত্বেও ঘটনাস্থলে মাছ কাঁকড়া ধরার উপর বনদফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমান সেই নিষিদ্ধ জায়গাতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই বিপদ ঘটেছে।একাধিকবার বনদফতরের তরফ থেকে নিষিদ্ধ জায়গায় মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও এক শ্রেণীর মৎস্যজীবী সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেই নিষিদ্ধ সুন্দরবনের জঙ্গল ও নদী খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছেন। এই ঘটনাও তারই পুনরাবৃত্তি বলে দাবী বনদফতরের। সেই কারণে এ বিষয়ে মৎস্যজীবীদের আরও বেশী করে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বন আধিকারিকরা।
 সুন্দরবন এলাকায় ব্যাঘ্র বিধবাদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে চলেছেন বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জ চম্পা মহিলা সোসাইটির কর্ণধার তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী শিক্ষক অমল নায়েক। এদিন মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের পাশে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অমল বাবু জানিয়েছেন  “সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে প্রতিনিয়ত মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলেছে।স্বামী হারিয়ে বিধবা হচ্ছে অসংখ্য মায়েরা।সুন্দরবনে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য  সরকার অবিলম্বে বিকল্প আয়ের সংস্থা না করলে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল কমবে না।”
অন্যদিকে বাঘের আক্রমণে মৎস্যজীবীর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে শোক প্রকাশ করে সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির ক্যানিং মহকুমার সভাপতি শম্ভু সাহা  বলেন “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক।সুন্দরবন জঙ্গলে প্রতিনিয়ত বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।দরিদ্র মৎস্যজীবীরা জীবন জীবীকার তাগিদে জীবন বিপন্ন করে সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে না যায় এবং বিকল্প রোজগারের সন্ধান পায় সে বিষয়ে সরকার মূখ্য ভূমিকা নিলে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর মিছিল কমতে বাধ্য হবে। উদ্যোগ এবং অসচেতনতার অভাবেই সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।”



     

Post a Comment

0 Comments