সুন্দরবনের প্রান্তিক গ্রামের আত্বীয়ত্বাকে সুদৃঢ় করার জন্য অভিনব উদ্যোগ
উমা শংকর মণ্ডল, গোসাবা
‘সাধ খাওয়া’ হচ্ছে বাঙালী এবং উত্তর ভারতের ঐতিহ্যবাহী একটি অনুষ্ঠান। ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও কমবেশি এর প্রচলন রয়েছে। বাঙালী ঐতিহ্য অনুসারে ‘সাধ ভক্ষণ বা খাওয়া’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে গর্ভবতী নারীর আকাঙ্খা অনুযায়ী খাবারের উত্সব বা অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে নানারকম খাবারের পাশাপাশি উপহার সামগ্রী দিয়েও হবু মায়ের কোল পূর্ণ করা হয়।গর্ভবতী কোন নারী যখন তার গর্ভাবস্থার সাত মাস পূর্ণ করেন, মায়ের জঠরে সন্তানের অবস্থানও যখন সুদৃঢ় এবং নিরাপদ হয়ে উঠে, তখনই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। অর্থা সাত মাসের শেষের দিকে অথবা আট মাসের শুরুতে পরিবারের অনাগত ছোট্ট মানুষটিকে স্বাগত জানাতে আয়োজন করা হয় এই ‘সাধ খাওয়া’ অনুষ্ঠানের। এসময় নতুন পোশাক, উপহার এবং ফলমূল দিয়ে ভরে দেওয়া হয় ভাবী মায়ের কোল। মূলত মাতৃত্বের অপার আনন্দ দেওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। গর্ভবতী নারীকে একজন মা হিসাবে নতুন পরিচয়ে প্রবেশের আগে উপহার সামগ্রী, ফলমূল এবং নানান স্বাদের খাবারে আপ্যায়িত করা। কখনও কখনও অলংকার দিয়ে সাজানো হয় হবু মাকে, হাতে চুড়ি পরানো হয়, কোল ভরিয়ে দেওয়া হয় নানান উপহারে, আর সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয় উপাদেয় সব খাবার। অনেক স্থানে এই অনুষ্ঠানে নাচ-গানেরও আয়োজন করা হয়। অনেক নারীর ক্ষেত্রে দিনটিকে হাসি-ঠাট্টা আর হাসি-মশকরা দিয়েও বিশেষভাবে সাজানো হয়। খেলাগুলো অনেকটা এরকম, অনাগত সন্তানটি ছেলে হবে, নাকি মেয়ে হবে, পেটের আকৃতি অনুযায়ী তা অনুমান করতে কিছু খেলার আয়োজন করা হয়। কিছু পরিবারে পায়েসের মধ্যে কিছু লম্বাকৃতি এবং কিছু গোলাকৃতি পিঠা বানিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়। লম্বা আকৃতির পিঠাগুলো হচ্ছে ছেলে সন্তানের প্রতীক, আর গোলাকৃতিগুলো মেয়ে। হবু মা হাত দিয়ে যে পিঠাটি তুলবেন, ধারণা করা হয়, সেই সন্তানটিই হবে তার। মূলত এটি খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে হবু মাকে এসময় এমন অনেক উপহার দেওয়া হয়, যা দিয়ে তিনি তার হবু সন্তানের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। এর মধ্যে আছে, শিশুর ব্যবহারের জন্য কাপড়-চোপড়, সোনা-রূপার চুড়ি এবং নগদ টাকা। আসলে পুরো পরিবারের একসাথে মিলিত হওয়া এবং অনাগত সন্তানের আগমন উপলক্ষে উত্সবে মেতে উঠার জন্য এই দিনটি হচ্ছে অনন্য।
কলকাতার মাইক্রোফোনের কর্ণধর দীপান্বিতা চট্টোপাধ্যায়ের কথাতে উঠে আসে বাংলা ভাষা বহুরূপী এবং ছলনাময়ী একই শব্দ বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়। সিদ্ধ হয় এই যে 'সিদ্ধ' শব্দটি তার সঙ্গে সাধ শব্দটির আত্মীয়তা আছে। এই শব্দের ধাতুমল আছে সংস্কৃত সিদ মানে সম্প্রদান বা সিদ্ধ করা। একই বানান সাধ যার শব্দার্থে অভিলাষ বা ইচ্ছা। নারীদের দেহে যখন মাতৃত্বের চিহ্ন পরিস্ফুট হয়, তখন এক মেয়েলি আচার হলো । পরিজন মূলত অপর আত্মীয়বর্গ সহ সেই আসন্ন মাথাটিকে পঞ্চব্যঞ্জনে তৃপ্ত করা। এই বিষাদধর্মী আখ্যানের সূচনা হতে পারে যে সন্তান প্রসব করা এক বিপদজনক ক্রিয়াজ তাই নারীটির অন্নভোজন করা হচ্ছে। যেমন, যুদ্ধের প্রাক্কালে সৈনিকদের ভোজন করানো ভারতীয় রীতি।কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষিতে এই অর্থ দাড়াবোনা অনুষ্ঠানটি তার অভিলাষ অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্য নয় কারণ প্রসব এই উন্নত প্রযুক্তিতে কোন আপৎকালীন ব্যাপার নয়। ব্যাপক অর্থেই ব্যবহারকেই বাঙালির স্বীকার করে নেওয়া উচিত আসন্ন সন্তানের সম্ভাবনার উদযাপন বলেই গণ্য হোক অনুষ্ঠান এই অনুষ্ঠান আরো আনন্দের যখন অত্যাধিক সময় ভবিষ্যতের মা যারা অসাধ্য সাধন করে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে মগ্ন তাদের একত্রে আহার গ্রহণের এই অনাবিল আনন্দের দৃশ্যের সাক্ষী হবে এ ভুবনে।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বাসিন্দা অন্নপূর্ণা হেঁসেলের কর্ণধার বনশ্রী সেনগুপ্ত বলেন-
মহিলার জীবনের অন্যান্য সমস্ত অনুষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি অন্যতম এক নারী থেকে মা তে রূপান্তরিত হওয়ার এক আনন্দময় এর সন্ধিক্ষণ'। বড়দের আশীর্বাদ ছোটদের ভালোবাসার পরিপূর্ণ এই অনুষ্ঠানটি তার মাতৃত্ববোধ কে আরো জাগিয়ে তোলে। এই বিশেষ দিনটিতে একজন গর্ভবতী নারী তার পরিবারের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তাই দিনটিতে প্রথাগতভাবে তার যাবতীয় পছন্দের রান্না করে খাওয়ানো হয় ও ভরিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহার ও আশীর্বাদ এর সাথে তার দুচোখে আসুন আমরা এই বিশেষ দিনটিকে সমস্ত অনুভূতি দিয়ে আমাদের সেই সব মায়েদের কাছে পৌঁছে দেয়।
সুন্দরবনের প্রান্তিক গ্রাম ছোট মোল্লাখালি কালিদাসপুর এর কল্পনা মন্ডল এর এক অনুভূতির কথা-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বঙ্গমাতা কবিতা লিখেছিলেন "পুণ্য পাপের দুঃখ সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানের"
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব প্রকৃতির সন্তান মায়ের জঠরে শিশুর বেড়ে ওঠা পরিবেশের ভূমিকা অনেক পরিবার সমাজ ও পরিবেশ এই তিনজনের মধ্য দিয়ে দান করা, দয়া করা সকলের ভোগই আমাদের ভোগ এই বোধ নিজে হৃদয় জাগ্রত হলে দানের দ্বারা অহংকার থেকে মানুষ নিজেকে মুক্ত করতে পারে। এই চিন্তা-ভাবনার পরিলক্ষিত ম্যানগ্রোভ ম্যান উমাশঙ্কর মন্ডলের চিন্তাভাবনা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাতৃজঠর থেকে লোভ, হিংসা, পরিত্যাগ করে সুস্থ সবল নিষ্পাপ শিশু হিসেবে পৃথিবীতে বিচরণের সুযোগ পায়। সেই মুহূর্ত চিন্তা ভাবনায় বিভিন্ন অঞ্চলে সাধ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মায়েদের হৃদয়ঙ্গম করতে এই অনুষ্ঠান যাতে মায়েরা শান্তি বোধ করেন। পরবর্তীকালে সুন্দরবন অঞ্চলের মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে তাই একাত্মবোধ তৈরীর উদ্দেশ্যে পূর্বাশা এগিয়ে এসেছেন। পূর্বাশার দীপঙ্কর মন্ডল, কাকলি মণ্ডল সরমা মন্ডল সহ ছোট মোল্লাখালি কালিদাসপুর বাণীকান্ত মোড়ের সহযোগী কর্মী হিসেবে গৌরী মন্ডল, হেমালিনী সরকার, সুরশ্রী ও বাণী মন্ডল দীপিকা মন্ডল, অপর্ণা মন্ডল ও সহযোগিতায় শিব মন্ডল এই কার্যক্রম সম্প্রদায় বিশেষ দায়িত্ব আমরা পালন করলাম।
সুন্দরবন গবেষক বীরভূমের বাসিন্দা সুস্মিতা চন্দ বলেন-
পশিচ্ম বাংলা তথা ভারতের গর্ব সুন্দরবন। কিন্তু আমাদের সেই গর্বের স্থল তাঁর অবস্থানগত কারণেই হোক বা মানুষের ভূলেই হোক, ক্রমাগত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হচ্ছে।কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়,কখনও মানুষ - বন্য প্রাণীর লড়াই , কখনও আবার বেঁচে থাকার
নূন্যতম চাহিদা পূরণের অক্ষমতা, আর এই সমস্ত কিছুই ওই অঞ্চল এর মহিলাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উপর মারাত্মক ধরনের প্রভাব ফেলছে।স্বাভাবিক মহিলাদের সাথে সাথে গর্ভবতী মায়েরাও সেখানে ভীষণ ভাবে বিপর্যস্ত। দু বেলা দুমুঠো অন্ন জোটাতে ই যাদের এত লড়াই তাদের কাছে গর্ভাবস্থাকালীন সংস্কার পালন, ঘটা করে সাধের অনুষ্ঠান পালন দিবা স্বপ্ন দেখারই এক রূপ।
তবে সেই দিবা স্বপ্নকেই সত্যি রূপ দিতে এগিয়ে এসেছে পূর্বাশা ইকো হেল্প লাইন সোসাইটি,যারা আইলা থেকে আম্ফান এগারো বছর ধরে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে বিভিন্ন ভাবে দাড়িয়ে এসেছে । ম্যানগ্রোভ ম্যান উমাশঙ্কর মণ্ডল এর বহুমুখী উদ্যোগের মধ্যে নতুন সংযোজন সাধের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো। বাঙালী রীতি অনুযায়ী এই ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন হবু মা এবং তার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করা হয় তেমনি অন্য মহিলাদের উপস্থিতি,তাদের পরামর্শ সেই গর্ভবতী মহিলার মধ্যে এক ধরনের সদর্থক ভাবনার জন্ম দেয়। শুধু গর্ভবতী মা কে মানসিক শক্তি প্রদানই নই এই ধরনের সংস্কার পালনের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনের গ্রাম্য সংস্কৃতি এবং সমাজকে আরো সঙ্গবদ্ধ করাও উমাশঙ্কর মণ্ডল র এই উদ্যোগের এক অন্যতম দিক । আশা রাখি,তাঁর এই সৎ প্রচেষ্টা আগামী দিনে বাদাবনের বহু গর্ভবতী মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে এবং তাদের নতুন জীবনের পথকে কিছুটা হলেও সহজ করে তুলবে।
সাধ নামক অনুষ্ঠানটিকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলার বিশেষ পরামর্শগুলি হলো
বিশ্রাম
অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানগুলি কিছুটা ঝক্কিবহুল হয়ে উঠতে পারে।তাই অনুষ্ঠানের আগে এবং পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করুন। অনুষ্ঠানক্ষেত্রে মনোনীত অবস্থানগুলি আপনার জন্য সংরক্ষিত করুন,যাতে প্রয়োজনবোধ হলেই আপনি সেই জায়গাগুলিতে সেই মুহূর্তেই বসতে পারেন।
বেশভূষা
আবহাওয়া অপ্রত্যাশিতভাবেই আপনার অনুষ্ঠানটিতে আনন্দনাশকের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।গ্রীষ্মের সময় এমন ধরনের শাড়িগুলি পরিধান করা এড়িয়ে চলুন যেগুলি খসখসে এবং কঠিণ বা মোটা সিল্কের হয়ে থাকে অথবা যেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সূচিকর্মের কাজ করা রয়েছে,কারণ এগুলি আপনাকে ঘর্মাক্ত করে তুলতে পারে।আবার শীতের সময় যদি আপনার খুব ঠাণ্ডা লাগতে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার সঙ্গীর কোর্টটিকে যেন গায়ে জড়াতে ইতস্ততবোধ করবেন না।
খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ
চারিদিকে প্রচুর ভাল ভাল খাবারের আয়োজন থাকার কারণে,এই অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করাটা বেশ প্রলুব্ধকর হয়ে উঠতে পারে।মনে রাখবেন যে এই সময় আপনার ডায়েটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংযত না হলে হৃদয় জ্বলন বা গলা বুক জ্বালা অম্বল এবং রক্ত শর্করার উত্থান পতনের মত সমস্যাগুলি সৃষ্টি হতে পারে।
অতিথিদের বিনোদন
আপনার অতিথিদের সন্তুষ্ট রাখুন এবং একটি ভালো অনুষ্ঠানের চাবিকাঠি হল সেটির বিষয়টি।ভাল ভালো খাবার ছাড়াও আপনি একজন মেহেন্দী শিল্পীকে ভাড়া করে আনতে পারেন যিনি অনুষ্ঠানে আগত মহিলা অতিথিদের হাতে তার শিল্প নৈপুণ্যের দক্ষতা ফুঁটিয়ে তুলে অতিথিদের মুখে আরও এক ঝলক হাসি বাড়িয়ে তুলবেন।
পাল্টা উপহার
অনুষ্ঠা্নটির জন্য আপনার যদি বিশাল বাজেট থাকে এবং আপনি আগত অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ দেখাতে চান,আপনি তাদেরকে বিদায়কালীন উপহার প্রদান করে পাঠাতে পারেন।এগুলি দোকান থেকে কেনা যেতে পারে,যেমন সুন্দর নকশায়িত দোপাট্টার মত মহিলাদের কিছু ঐতিহ্যবাহী উপকরণ অথবা এমনকি সেটি হাতে তৈরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন কার্ডও হতে পারে।
ভারতে জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ বা গর্ভবতী মাকে সাধ দেওয়া হল একটি ঐতিহ্যগত বিষয়,তবে এ ব্যাপারে কয়েকটি পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্রে কোনও কঠোর বিধিনিষেধ নেই।নিম্নলিখিতগুলি হল এমন কিছু ধারণা যেগুলি আপনি প্রয়োগের চেষ্টা করতে পারেনঃ
অনুষ্ঠানের থিমে শিশুর প্রসঙ্গ
গোধ ভরাই বা সাধ অনুষ্ঠানটির সাথে সর্বদাই একটি থিম জড়িত থাকতে পারে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি থিম হতে পারে শিশুর প্রসঙ্গ,যেখানে একটা প্লেট থেকে ন্যাপকিন সকল কিছুর প্রস্তুতির উপরেই শিশুর একটি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
আহার সামগ্র
ক্যাটারিংয়ের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হতে পারে এবং সাধারণত অনুষ্ঠানের শেষে অনেক খাবারই নষ্ট হয়ে থাকে।মেনুতে কি থাকবে এবং অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত প্রতিটি ব্যক্তি যাতে তাদের পরিমাণ মতই খাবার পান সে ব্যাপারে আপনি এবং আপনার বান্ধবীরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
হবু মাকে প্রশ্রয় দেওয়া
জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ বা গর্ভবতী মাকে সাধ দেওয়ার সারমর্মটি হল সকলকে এই বিষয়টি জানতে দেওয়া যে আপনিই হলেন এই অনুষ্ঠানটিতে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।এর অর্থ হল অনুষ্ঠানগুলির মূখ্যতা কম এবং আপনাকে বিশেষ অনুভব করানোর জন্য এর বাজেটটি হল বহুমূল্যের।এর মধ্যে স্পা অথবা কোনও নাম করা সেলুনের কুপনগুলিও অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।
বন্ধুসুলভ ডায়েট
গোধ ভরাই বা সাধের অনুষ্ঠানটি যদি আপনাকে ঘিরেই হয়ে থাকে তবে কেন পরিবেশিত বেশিরভাগ খাদ্যেরই স্পর্শ পাওয়ার অনুমতি আপনার নেই?এখানে কিছু বিষয় আপনি পরিবর্তন করতে পারেন।এমন একটি ক্যাটারিং করাতে পারেন যারা কেবল মাত্র স্বাস্থ্যকর জলখাবারগুলিই পরিবেশন করবে এবং যেখানে কেবল গর্ভবতী–বান্ধব খাবারগুলিই অনুমোদিত।
জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ বা গর্ভবতী মা হিসেবে নিজের জন্যই সাধ দিন
জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ বা গর্ভবতী মায়ের সাধের অনুষ্ঠানটি যে সর্বদাই কোনও শৌখিন জায়গায় বা অনুষ্ঠান মণ্ডপে হয়ে থাকতে হবে এমন কোনও কথা নেই।জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ বা গর্ভবতী মা হিসেবে নিজের জন্যই সাধা দেওয়া হল এমন একটি বিষয় যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর প্রতি তার জন্মের পূর্বে আশীর্বাদ বর্ষণের একটি যথোপযুক্ত সুন্দর ও ভালো পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আপনার দক্ষতার উপরেই জোর দেয়।অতিথিদের হাতে তৈরী সুন্দর নকশা করা ফিতেগুলি উপহার হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।গৃহের সাজসজ্জাগুলি চার্ট পেপারের দ্বারা নানান নকশা করে করা যেতে পারে এবং এমনকি সকলকে দেওয়া প্রতিটি উপহারই অবশ্যই হাতে প্রস্তুত হতে হবে।
পরিবেশ–বান্ধব থিম
আপনি কি প্রকৃতি প্রেমী?আবহাওয়া যদি মনোরম থাকে তবে অনুষ্ঠানটি ঘরের বাইরে সম্পাদন করা যেতে পারে।অনুষ্ঠানক্ষেত্রটিকে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজ প্লেট এবং কাপ ব্যবহারের দ্বারা একটি প্লাস্টিক–মুক্ত অঞ্চল করে তোলা যেতে পারে।প্লাস্টিকের চামচগুলি এড়াতে হাত দিয়ে খাওয়ার প্রতি উৎসাহ বাড়িয়ে তোলা যেতে পারে এবং মণ্ডপের সজ্জীকরণ নূন্যতম হতে হবে।
এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য অংশে পালিত অনুষ্ঠানটি যে বিভিন্ন নামে পরিচিত তার মধ্যে রয়েছেঃ
পশ্চিম বাংলা
বাংলায় “সাধ” নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানটিতে নানান সুস্বাদু খাবারের উপর প্রভূত জোর দেওয়া হয় এবং এটি গর্ভাবস্থার শেষ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে,এবং সাধারণত এই মাসে গর্ভবতী মায়ের বাপের বাড়ির দিক থেকেই এটি পালন করা হয়,তবে আবার শ্বশুর বাড়ির দিক থেকেও এটি উদযাপন করা হয়ে থাকে সম্ভবত গর্ভাবস্থার সাত মাসে,তবে কারুর কারুর মধ্যে আবার তাদের নিয়ম অনুসারে গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসেও ছোট করে সাধ দেওয়ার রীতি আছে।তবে এই অনুষ্ঠান পালনের অনন্য দিকটি হল এক্ষেত্রে গর্ভবতী মাকে তার অনাগত শিশুর জন্য কোনও উপহার দেওয়ার রীতি নেই কারণ এক্ষেত্রে সেটি হয়ত দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
কেরালা
“সীমান্ধান” হিসেবে পরিচিত অনুষ্ঠানটি অন্তঃসত্ত্বা মায়ের আবশ্যিকভাবে একটি পবিত্র ডুব দেওয়াতে অংশগ্রহণ করার সাথে জড়িত।অনাগত শিশুর বুদ্ধিমত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে তার উদ্দেশ্যে প্রায় ৯০ মিনিট ধরে এই অনুষ্ঠানটিতে মন্ত্র উচ্চারণ এবং প্রার্থনা করা হয়ে থাকে।
তামিল নাড়ু
“ভালাই কাপ্পু” হিসেবে পরিচিত এই অনুষ্ঠানটিতে হবু মাকে লাল এবং সবুজ চুড়ির সাথে একটি কালো শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে অপবিত্র সত্ত্বাগুলির থেকে রক্ষা করা হয়।অন্তত পক্ষে চারটি ভিন্ন মন্দির পরিদর্শনের সাথে এক্ষেত্রে মন্দিরগুলি একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে,যা এই অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পাঞ্জাব
“গোধ ভরাই” অনুষ্ঠানটি সাধারণত গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে খুব নিকট আত্মীয়–স্বজনদের সাথে পালন করা হয়।এই অনুষ্ঠানটিতে শাশুড়ি মায়ের মূখ্য ভূমিকা রয়েছে,যেখানে তিনি প্রার্থনা করার পর এক আঁচল ভর্তি ফল এবং নারকেল তাঁর কন্যা সমান বৌমার কোলে রাখেন।
গুজরাট
এখানে এই অনুষ্ঠানটি “গোধ ভরনা” হিসেবে পরিচিত।পাঞ্জাবী রীতির সাথে এর বেশ কিছুটা মিল রয়েছে,এখানেও এই অনুষ্ঠানটিতে শাশুড়ি মায়ের একটি মূখ্য ভূমিকে রয়েছে।এখানে হবু মাকে বাজথ নামে একটি আসবাবের উপর হাঁটু মুরে বাবু হয়ে বসানো হয়।তারপর তার শাশুড়ি মা তার কোলের উপর গয়নাগাটি এবং আরও অন্যান্য উপহারগুলি রাখেন।
মহারাষ্ট্র
মারাঠি ভাষায় এখানে এটি “দোহাল জেভান“নামে পরিচিত যার মোটামুটি অনুবাদটি হল ‘খাদ্য আকাঙ্খার পরিতৃপ্তি‘।নামের দ্বারা প্রমাণ স্বরূপ,এই অনুষ্ঠানটিতে খাদ্যের দিকটিতে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়।ভাত এবং মিষ্টি চাপাটির মত পুষ্টিকর খাদ্যগুলিকে এই অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত খাদ্য মেনুতে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।এই অনুষ্ঠানের একটি উত্তেজনাপূর্ণ দিক হল প্রতিটি খাবারের সাথে লিঙ্গ সংযুক্তি যা লিঙ্গ অনুমানের খেলায় রূপান্তরিত হতে পারে।
এটি কখন অনুষ্ঠিত হয়? কেরালা রাজ্যের নায়ার সম্প্রদায় অনুষ্ঠানটি গর্ভাবস্থার শেষ মাসে পালন করে থাকেন, যেখানে প্রতিবেশী তামিল নাড়ু রাজ্যে এটি কিছু সময় গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে পালিত হয়ে থাকে,যদিও এটিকে সপ্তম অথবা নবম মাসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
কীভাবে এটি অনুষ্ঠিত হয়?বেশিরভাগ গোধ ভরাই বা সাধ অনুষ্ঠানগুলিতে প্রার্থনা করা হল এর একটি অপরিহার্য অংশ,যেখানে নিয়মমাফিক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থনা এবং একসাথে সমন্বিত স্বরে মন্ত্র উচ্চারিত করা হয়।অন্য যেকোনও অনুষ্ঠানের মতই,সাজগোজ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনাকে প্রথাগত পোশাক পরিধান করিয়ে ফুলের অলঙ্কারে সুশোভিত করে তোলা হবে।দেশের বহু অংশে তেল প্রলেপনের একটি বিশেষ জায়গা আছে,এবং আপনি প্রায়শই পরিবারের বয়োঃজ্যেষ্ঠ্যা মহিলাদের দ্বারা উপলিপ্ত হয়ে থাকেন।
কোনও কিছু মজা ছাড়া কীভাবে একটা অনুষ্ঠান সম্পাদিত হতে পারে?শিশুর কথা মাথায় রেখে এই খেলাগুলি শুরু করা হয় এবং লিঙ্গ অনুমান করা থেকে শুরু করে তার নাম চয়ন করা পর্যন্ত এই খেলাগুলি চলতে থাকে।
গর্ভবতী মহিলার সাধ বা জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণের ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ স্বরূপ নাচ–গান এর সাথে অন্তর্ভূক্ত।
হবু মাকে মজার ছলে কিছুটা উত্যক্ত সর্বদাই করা হয়ে থাকে।তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্য ছাড়াই সবটাই একটা ভাল হাস্যরসাত্মকভাবে করা হয়ে থাকে।দেশের কিছু কিছু অংশে আবার এই অনুষ্ঠানটিতে কেবলমাত্র মহিলা অতিথিরাই নিমন্ত্রিত হয়ে থাকেন। গোধ ভরাই অনুষ্ঠানটির নামটির সাথে জড়িত অর্থানুযায়ী এবং রীতি অনুযায়ী পরিবারের মহিলাদের পাশাপাশি আপনার বান্ধবীরাও মিষ্টি এবং ফলের দ্বারা আপনার কোল ভরিয়ে তুলবেন।
সহজে প্রবেশযোগ্য একটি স্থানে আপনাকে বসানো হবে যেখানে আপনার আত্মীয় পরিজন,বন্ধুবান্ধব সহজেই প্রবেশ করে আপনাকে আশীর্বাদ করতে পারেন।
গোধ ভরাই বা জন্মের পূর্বে গর্ভস্থ শিশুর প্রতি আশীর্বাদ বর্ষণ অনুষ্ঠানটিতে উপহার দেওয়ার অংশটি কেবলমাত্র মাতৃকেন্দ্রিক এবং সেখানে উপহারের জন্য থাকতে পারে মায়ের জন্য শাড়ি,গয়না এবং অন্যান্য পোশাক ইত্যাদি।সাধের মত অনুষ্ঠানে আবার বহু সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন শিশুর জন্য উপহার কেবলমাত্র শিশুর জন্মের পরেই দেওয়া উচিত।
0 Comments
Welcome