কেন্দ্র, রাজ্য সংঘাতের মধ্যে পড়ে থমকে সুন্দরবনবাসীর রেল স্বপ্ন
নুরসেলিম | বাসন্তী| বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের কথা কারও অজানা নয় । কিন্তূ এই সংঘাতের মধ্যে পড়ে পিছিয়ে যাচ্ছে এরাজ্যের অধিকাংশ উন্নয়মূলক কাজ। আর এই থমকে থাকা উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম সুন্দরবনের "রেল প্রকল্প " । সুন্দরবনবাসীর দাবি আদায়ের মেলা নামে পরিচিত 'সুন্দরবন কৃষ্টি মেলা ' থেকে সর্বপ্রথম এই দাবি তোলা হয়,২০০৮ সালের এই মেলাতে অতিথি হিসাবে আসা তৎকালীন লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জীর হাতে প্রায় দু - লক্ষ সুন্দরবনবাসীর স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন পত্র তুলে দেন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা বিশিষ্ট সমাজ কর্মী লোকমান মোল্লা । তার পর সোমনাথ বাবু দিল্লী ফিরে তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবকে এই বিষয়ে চিঠিও দেন, এর পর ২০০৯ সালে পরবর্তী রেল মন্ত্রী তথা বর্তমান এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মাতলা নদীর উপরে রেল ব্রিজ তৈরীর শিলার্নাশ করেন, সেই মতো কাজও শুরু হয় তৈরী হয় মাতলা নদীর উপর একুশ টি পিলার । তার পর থেকে কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই ২০১১ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত থমকে সুন্দরবনবাসীর স্বপ্নের রেল প্রকল্প । তবে এই স্বপ্নকে পূরণ করতে বদ্ধপরিকর সুন্দরবনবাসী, সেই মতো কখনো তারা আন্দোলনে নেমেছে আবার কখনো সমগ্র সুন্দরবনবাসীর দাবির কথা জানাতে দিল্লী পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন এই স্বপ্নের রূপকার তথা সমাজকর্মী লোকমান মোল্লা । তিনি সুন্দরবনবাসীর অপূর্ণ স্বপ্নের ফেলিওয়ালা হয়ে ২০১৬সালে আবার রাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এস. আলুওয়ালিয়া কে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন রেল মন্ত্রী সুরেশ প্রভুর হাতে অগণিত সুন্দরবনবাসীর স্বাক্ষরিত সেই দাবি পত্র তুলে দেন এবং থমকে থাকা কাজ শুরু করার আবেদন জানান । তবে এতো চেষ্টার পরও কোন বরফ গলেনি, শুরু হয়নি সুন্দরবনে রেল সম্প্রসারনের কাজ ।
আর এরই মধ্যে সামনে বিধানসভা ভোটের আগে এই প্রকল্প নিয়ে চলছে তৃণমূল, বিজেপি দড়ি টানাটানি । এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার অনুযায়ী তৃণমূলের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কো-আর্ডিনেটর পরেশ রাম দাস বলেন " আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উন্নয়ন কে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এটা একটা চক্রান্ত "। পরেশ রাম দাসের পাল্টা আবার বিজেপি নেতা পবিত্র সাঁহফুই বলেন " এই প্রকল্প থমকে যাওয়ার জন্য দায়ী তৎকালীন রেলমন্ত্রী তথা বর্তমান এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তার গা ছাড়া মনোভাবের ফলে আজ এই অবস্থা " । আর তৃণমূল, বিজেপির এই কাদাছড়াছড়ির মধ্যে প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী তথা আর.এস.পি নেতা সুভাষ নস্কর বলেন " সুন্দরবনের মানুষ কে ঠকিয়ে, ফন্দি ফিকির করে রাতারাতি শিলার্নাস করে রেল সম্প্রসারণ করা যায় না, তিনি ওনার স্বার্থের জন্য এই প্রকল্পের শিলার্নাস করেন, তবে শুধু কটা পিলার তুললে রেল রেল চালানো যায় না, মাঝখানে পড়ে শুধু দেশের ২০০ কোটির টাকা নষ্ট হয়ে গেল " ।
তবে এই দড়ি টানাটানির মধ্যে পড়তে রাজি নয় সুন্দরবনের মানুষজন । তাদের কথা হলো অবিলম্বে এই থমকে যাওয়া রেল প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে, নয়তো তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন এবং শোনা যাচ্ছে তারা নাকি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থের মামলাও দায়ের করতে চলেছে । এখন দেখার কেন্দ্র, রাজ্য সংঘাত মিটিয়ে কবে শুরু হয় সুন্দরবনবাসীর স্বপ্নের রেল প্রকল্প ।
0 Comments
Welcome