' ইয়াস ' বিধ্বস্ত গোসাবার মানুষের পাশে ' প্রান্তিক সুন্দরবন '
নূরসেলিম লস্কর |গোসাবা: প্রান্তিক সুন্দরবন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সুন্দরবন সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের যুবদের নিয়ে গঠিত সংস্থা। গতবছরের লকডাউন পর্ব থেকে জীবনতলা থানার পিয়ালি এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছে। ঈবিকা নির্বাহের জন্য অল্প সময়ে কলকাতায় গিয়ে কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পিয়ালী-চম্পাহাটী-গৌড়দহ-ঘুটিয়ারীতে বসবাস করা প্রান্তিক মানুষেরা যখন কর্মহীন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন প্রান্তিক সুন্দরবন এই সকল মানুষের আশ্রয় হয়ে ওঠে। এছাড়া কোভিড আক্রান্ত মানুষদের দেখে গ্রামের মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তখন এরাই এলাকার কোভিড আক্রান্তদের খুঁজে বের করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বিনামূল্যে অক্সিজেন, ওষুধ দেওয়া, আক্রান্তের বাড়ি জীবাণুমুক্ত করার কাজ করেছে। যখন কোনো এম্বুলেন্স করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছে না, তখন এরা একটা অটো ঠিক করে বিনামূল্যে করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এছাড়া 'কোভিড ক্যান্টিন' চালু করে পিয়ালী এলাকার কোভিড আক্রান্তদের বাড়িতে নিজেরা নিয়মিত খাবার পোঁছে দিচ্ছে। এর পর সাইক্লোনে যখন সমগ্র সুন্দরবন বিপর্যস্ত, তখন প্রান্তিক সুন্দরবনের সুবোধ মণ্ডল, আদিত্য জোতদার, রণবীর বর্মন রা গোসাবার পাখিরালয়ে এসে সমগ্র দ্বীপ ঘুরে মানুষের সমস্যার জায়গাগুলো অনুসন্ধান করে। তারা লক্ষ্য করে যে, বাঁধ ভেঙে বহু মানুষের ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে, রান্নার পরিবেশ নেই। তারা দেখেছে কলকাতা থেকে বহু মানুষ ত্রান নিয়ে এসে নদীর পাড়ে ডেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে। অথচ দ্বীপের মাঝের বাসিন্দারা থেকে যাচ্ছে বঞ্চিত। তাই তারা ঠিক করে যেখানের অভুক্ত মানুষের কাছে বিশেষ কোনো সাহায্য পৌঁছচ্ছে না, তাদের কাছে রান্না খাবার নিয়ে পৌঁছে যাবে। আর একটি বিষয়ে সংস্থার সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় যে খবারের জন্য কাউকে লাইনে তারা দাঁড় করাবে না। প্রান্তিক মানুষের আপনজন এই সংস্থার অন্যতম পরিচালক সুবোধ মণ্ডলের কথায়- 'আমরা খাবারের জন্য কোনো মানুষকে লাইনে দাঁড় করাবো না, বরং আমাদের প্রতিটি সদস্য পৌঁছে যাবে অভুক্ত মানুষের কাছে'। প্রান্তিক সুন্দরবন ঠিক করেছে যতদিন এলাকার পরিবেশ ঠিক না হবে ততদিন রান্না করা খাবার নিয়ে বানের জলে ভেসে থাকা মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার নিয়ে যাবে তারা। খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এলাকার বানের জল থেকে যে কয়টি পুকুর রক্ষা পেয়েছে, যেখানে দূর দূরান্ত থেকে স্নান করতে আসছে মানুষেরা, সেই পুকুরগুলোতে চুন দিয়ে শোধন করবে। এলাকার যেসব জায়গায় এখনো পচা মাছে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সেগুলোকে পরিষ্কার করার কাজ করবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সুন্দরবনের এই ভূমিপুত্ররা গুরুত্ব দিচ্ছে তা হল, তারা মনে করে সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের নিজেদেরকে। তাই সুন্দরবনের বাঁধ ভাঙা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা নদীবাঁধের সামনের ম্যানগ্রোভহীন চরে প্রতি বছর ২০০০ করে ম্যানগ্রোভ রোপন করবে। এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত, রেঞ্জার অফিস ও বিডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
0 Comments
Welcome