"হে সরস্বতী, তোমায় শতকোটি প্রণাম.."
ভারতবর্ষ তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। এক নতুন গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক চাপানতরের মাঝখানেই এগোচ্ছে আমাদের দেশ। এর মাঝেই আবির্ভাব ঘটলো এক কোকিলা কণ্ঠের। শুরুটা হয়েছিল এক মারাঠি গান দিয়ে 13 বছর বয়সে। 1949 সালে প্রথম এক মারাঠি গানের মাধ্যমে তিনি সকলের নজরে আসেন। কিন্ত তিনি ভারতবিখ্যাত হয়েছিলেন এক দেশাত্মবোধক গান গেয়ে, যা স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর চোখেও জল এনে দিয়েছিল। গানটি ছিল "অ্যা মেরে ওয়াতান কি লোগো।" আর সেই কোকিলা কণ্ঠের নাম লতা মঙ্গেশকর।
লতা মঙ্গেশকর ভারতবর্ষের শুধু একজন বিখ্যাত গায়িকা বললে আপনি খুব বড় ভুল করবেন। তিনি শুধু ভারতবর্ষের একজন গায়িকা বা গর্ব নন। তিনি স্বয়ং ভারতবর্ষের কন্ঠ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রফি সাহেব, কিশোর কুমার থেকে শুরু করে এ যুগের উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, সোনু নিগম সকলের সঙ্গেই তালে তালে মিলিয়ে গেয়ে গিয়েছেন।
তার গাওয়া বিখ্যাত গানের কথা বলে সময় নষ্ট করা হবে, কারণ তিনি যে গানটিই গেয়েছেন সেটিই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। ভারতবর্ষের ভোজন সঙ্গীতকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান ভারতবর্ষের আট থেকে আশি এমন কেউ নেই যে এই কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়নি।
তিনি একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, "আমি হিন্দি গানের পর সবথেকে বেশি বাংলা গান গেয়েছি। তাই মারাঠির আগে আপনি আমাকে বাঙালি বলতে পারেন। আসলে আমি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের নই, আমি গোটা ভারতবর্ষের।"
2001 সালে তিনি "ভারতরত্ন" এ সম্মানিত হন।
পদমভূষণেও সম্মানিত তিনি। গ্লোবাল ইন্ডিয়ান মিউজিক এর "লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট" এ তাকে সম্মানিত করতে এসে এ.আর.রহমান তাকে প্রণাম করে বলেছিলেন, "ছোটবেলায় আমার বাড়িতে আমার বাবা তাঁর(লতাজির) একটি বড় ছবি লাগিয়েছিলেন। আমি রোজ সকালে সেটির সামনে দাঁড়িয়ে সেটিকে প্রণাম করতাম। সেই জন্যই হয়তো আজ এত বড় জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি আমি।
2001 সালে "কাভি খুশি কাভি গম" সিনেমার মাধ্যমে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সমাপ্তি হয়। আর আজ সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের দিন আমরা হারালাম আমাদের ভারতবর্ষের সরস্বতীকে। লতাজি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা হারালাম ভারতবর্ষের সংগীত জগতের সবথেকে বড় কিংবদন্তিকে। তাঁকে নিয়ে আমাদের বলার কিছুই নেই, শুধু তার একটি গানের লাইন সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাই,
"Meri awaz hi pehchan hein......."
0 Comments
Welcome