আন্তর্জাতিক বসুন্ধরা দিবস পালিত হলো কুলতলিতে
বাবলু হাসান লস্কর
কুলতলী : দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে পশ্চিমবঙ্গ যেন সারা ভারতের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। আসমুদ্র হিমাচলের কথা মনে করিয়ে দেয় পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক বিস্তার। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে হিমালয় এবং একদম দক্ষিণে সুন্দরী সুন্দরবনের অবস্থান। আর সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ার বৈচিত্র্য লক্ষ্য করার মতন। আর এই বৈচিত্র্যের জন্য সারা বিশ্বের মতো পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে আবহাওয়া পরিবর্তনের সমস্যার বিভিন্ন দিকগুলো। সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া আমফান বা ইয়াসের মতন ঝড়ের পরে পরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোমর বেঁধে লেগেছে লেগে পড়েছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের সমস্যা দিকগুলোর সাথে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। শুধু ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান নয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তরে এই সংক্রান্ত বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে যার কাজ সারা পশ্চিমবঙ্গে ক্লাইমেট বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে লড়াই করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলি পিছিয়ে থাকেনি। তারা সারা বিশ্বের এই ক্লাইমেট চেঞ্জ এর যে সমস্যা তার প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গত ৫০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাথে একসাথে কাজ করে চলা সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিনিকে সবাই স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির বিষয়ে কাজ করে চলা সবচেয়ে অগ্রণী সংস্থা হিসেবে জানলেও, এই সংস্থা তার পঞ্চাশ বছরের প্রাক্কালে বেশ একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে পরিবেশ বাঁচাও কর্মসূচি। কারণ আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্য পুষ্টি এ বিষয়গুলি। সিনির কর্ণধার তথা প্রতিষ্ঠাতা ডঃ সমীর নারায়ন চৌধুরী বিশ্বাস করেন যে কিশোর কিশোরীদের বিভিন্ন প্ল্যান পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করানো গেলে তবেই আমরা উন্নয়নের সঠিক লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো। আবহাওয়ার পরিবর্তন সংক্রান্ত যে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কিশোর কিশোরীরা কি ভাবছে সে কথা জানতে সিনি একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। হোয়াট চিলড্রেন ওয়ান্ট নামে এই ক্যাম্পেইনটি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ প্রান্তে গ্রহণ করা হয়েছে। এই বছর আন্তর্জাতিক বসুন্ধরা দিবস কে কেন্দ্র করে এই প্রকল্পের অন্তর্গত বিভিন্ন কিশোর-কিশোরীরা সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি নেয়। ২০২৩,বাইশে এপ্রিল কলকাতায় শুরু হওয়া বসুন্ধরা দিবস বিভিন্ন জেলা ছাড়িয়ে শেষ হয় সুন্দরবনে। সুন্দরবনের কুলতলীতে এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তির দিনে জড়ো হয়েছিল কয়েকশো কিশোর কিশোরী এবং বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ২৭ এপ্রিল কুলতলিতে এ নিয়ে একটি বিরাট রোড শো এর আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে লক্ষ্য করার মতন ছিল প্লাস্টিকের ব্যবহার না করা। এমনকি অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ব্যানার ও ছিল কাপড়ের তৈরি। কিশোর কিশোরী এবং অনুষ্ঠানে আসা সেল্ফ হেল্প গ্রুপের মহিলারা শপথ নেন যে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুধু কম করা নয় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ এবং একে পুনর্ব্যবহার করার দিকে তারা বিশেষভাবে নজর দেবেন । শিশুদের কুইজের উত্তর থেকেই উঠে এলো পৃথিবী রক্ষার সুন্দর ভাবনা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা শনির পর দলের সদস্যরা বানিয়ে এনেছিলেন দুই পৃথিবী একটি পৃথিবী ছিল সবুজ এবং আরেকটি পৃথিবী ছিল হলুদ। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সেই পৃথিবী দেখিয়ে তারা পথ চলতি মানুষের কাছে জানতে চান, যে আমরা কোন পৃথিবী চাই এরকম সবুজ পৃথিবী না হলুদ পৃথিবী?
অনুষ্ঠানের কর্মকর্তা সিনির সুজয় রায় জানান যে শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত, শুধু তথ্য নয়, ওদের সুন্দর পরিবেশ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের পাঁচ কোটির বেশি ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়েছেন এবং সেই কর্মসূচিকে আরেকটু এগিয়ে দিতে তিনি এই উদ্যোগ। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এক কিশোরী বলেন গাছ লাগানোর সাথে সাথে গাছ কাটা বন্ধ করা দরকার, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পরিবেশ সচেতনতা মূলক কর্মসূচির পাশাপাশি সিনির মতন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এই ধরনের সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেন সুন্দরবনকে tকেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলনকে আরো জোরদার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।