সুন্দরবন শিশু উৎসব হয়ে গেল ক্যানিং গোপালপুর পঞ্চায়েতের ধর্মতলা গ্রামে

সুন্দরবন শিশু উৎসব হয়ে গেল ক্যানিং গোপালপুর পঞ্চায়েতের ধর্মতলা গ্রামে

নিজস্ব প্রতিনিধি: দঃ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার গোপালপুর পঞ্চায়েতের আমতলায় “ধর্মতলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় এবং সারা বাংলা শিশু সংস্থা” কলকাতার প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতায়- ধর্মতলা ইউথ ক্লাবের মাঠে ২১ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ বর্ষ ” সুন্দরবন শিশু উৎসব-২০২৪” উপলক্ষে শিশুর শরীর শিক্ষা প্রশিক্ষণ শিবির ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাড়ম্বরে। ২১ জানুয়ারির বিকেলে মূলত জমায়েত সূচনা শুরু হলেও ২২ তারিখের সকালেই শুভ উদ্বোধন হয় অনুষ্ঠানটি।
পাঁচদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হলে। ২৬ তারিখের অভি-প্রদর্শনী অনুষ্ঠান টি প্রধান শিক্ষক ও মেলা কমিটির সম্পাদক প্রবীর কুমার গায়েন বাবুর দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে বিকেল ৪টে থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত কম্প্যাক্ট অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি ঘটে জাতীয় সংগীত ও সভাপতির ভাষণ এর মাধ্যমে। এই অভিপ্রদর্শনীর মধ্যে ছিল প্যারেড, পিটি, ফেন্সী ড্রিল, লেজিম, ডাম্বেল, ব্রতচারী, জিমন্যাস্টিকস, প্রাদেশিক লোকনৃত্য, ড্রাম, বাঁশি, জিপসী, ছড়া ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, প্রাথমিক চিকিৎসা, খো খো, ক্যারাটে, কাবাডি, লাঠি খেলা ও ছড়ি নাচ ছিল চোখে পড়ার মতো। পথ চলতি জনতা একলহমা থমকে দাঁড়ায়।

সুন্দরবনের প্রান্তিক, প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ধর্মতলা এলাকা। খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের এইরকম একটা সুশৃংখল পরিবেশ তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেওয়াতে ক্যানিং ব্লক-১ এস.আই. খুব খুশি। ধর্মতলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কে আধুনিকীকরণ ও সৌন্দর্যায়নের মাত্রা এত বৃদ্ধি পেয়েছে- অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডঃ কার্তিক চন্দ্র প্রামাণিক তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে তুলে ধরে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন জেলায় আদর্শ মডেল স্কুল হিসেবে স্কুলটি কে নির্বাচন করা উচিত।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার গায়েন শিক্ষা হিতৈষী ও সহৃদয় বন্ধু-বান্ধবদের কাছে সহযোগিতার হাত পেতে স্কুলটিকে শুধু চক-চকে ও মনোরম করেননি, শিক্ষার পরিকাঠামোগত রূপরেখা পাল্টে দিয়েছেন। এই এলাকার আপামর জনসাধারণ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সকলেই প্রবীর বাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের চিহ্ন আর এখানে নেই। তবে সুন্দর মানুষে ভরা এই গ্রাম। যেখানে দাদা হুজুর প্রতিষ্ঠিত একটা পুরনো খারেজী মাদ্রাসা রয়েছে। এবং সুন্দর জুমা মসজিদও স্ব- মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।


অভি-প্রদর্শনী গুলো প্রদর্শিত হয় প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রায় পাঁচ মিনিটের পথ অতিক্রম করে “ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে” যার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে একটি প্রশাখা নদী। এবং মাঠের পূর্ব প্রান্তে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে একটি মন্দির। নদী পেরিয়ে আসলেই ঢোষা হাট। দুই থানার মধ্যবর্তী এই প্রান্তিক হাটে কয়েক লক্ষ মানুষের আনাগোনা। সুন্দরবনের এই প্রান্তিক হাট মানুষের প্রাণকেন্দ্র সপ্তাহে দুদিন এখানে মিলন মেলা বসে। পূর্ব রেলের দক্ষিণ শাখার ক্যানিং অথবা নামখানা আগামী দুটি লাইন থেকেই এখানে আসা-যাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অবর বিদ্যালয় পরি দর্শক ক্যানিং চক্রের- সতীপ্রসাদ ঘোড়ূই, প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ কার্তিক চন্দ্র প্রামানিক (অধ্যাপক কে.ডি. কলেজ অফ কমার্স) কাঁথি পূর্ব মেদিনীপুর, বিশেষ অতিথি ছিলেন তাপস কুমার মন্ডল, আধিকারিক জেলা গ্রন্থাগার দপ্তর, অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ নাইয়া প্রধান শিক্ষক রানা বেলিয়াঘাটা উচ্চ বিদ্যালয় (বারুইপুর) ,সত্যবান পাত্র, আই.সি.ডি.এস.-র বড়বাবু ঝাড়গ্রাম, সুরেশ্বর মান্না অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বিজয় নগর আদর্শ বিদ্যা মন্দির গোসাবা, তপন কুমার মন্ডল জেলা পরিষদ সদস্য দঃ ২৪ পরগনা, সুুকুমার পয়রা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় নগর আদর্শ বিদ্যা মন্দির গোসাবা, পবিত্র সরকার শিক্ষক ধর্মতলা অবৈঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা বাংলা শিশু সংস্থা’র প্রতিষ্ঠাতা মহঃ মুশা হক ওরফে মামা (প্রতিষ্ঠাতা “সারা বাংলা শিশু সংস্থা,কলকাতা) ও মুখ্য প্রশিক্ষক মলালী মিস্ত্রী’র নেতৃত্ব সহ আরো ২০জন সহ প্রশিক্ষক এই প্রশিক্ষণ দান করেছেন।


অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির সভাপতি বৃন্দাবন মন্ডল, স্কুলের ভূমিদাতা মশিয়ার হালদার, ক্যানিং -১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম আখন, গোপালপুর পঞ্চায়েতের সদস্যা ফাউজিয়া, এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর দেওয়ান সম্পাদক আজাদ বার্তা সহ এলাকার শিক্ষানুরাগী সমাজ স-চেতক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিদগ্ধ মানুষজন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সুষ্ঠু ও সুন্দর সঞ্চালনা করেন গোসাবা বিজয় নগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মান্না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন