নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : বর্ষার শুরুতেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় পাঁচশো মহিলা চাষির হাতে চাষের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখা বীজ ধান তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় পাট এবং সহযোগী তত্ত্ব অনুসন্ধান সংস্থার ব্যারাকপুর শাখার অধিকর্তারা । বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসন্তীর কুলতলিতে ঐ কেন্দ্রীয় সংস্থার উদ্যোগে ও কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটি নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় তফশিলি জাতি উপ – পরিকল্পনা কর্মসূচির অধীনে এই বীজ ধান বিতরণ করা হয় । আর বর্ষার শুরুতেই যখন ধান চাষের জন্য পরিকল্পনা করছেন সুন্দরবনের চাষীরা ঠিক সেই মুহূর্তেই এই বীজ ধান পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে খুশি সুন্দরবনের ঐ কৃষকরা। যেমন বীজ ধান পাওয়ার পর বাসন্তীর জোতিষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঝর্ণা মন্ডল নামের এক মহিলা কৃষক বললেন, ” চাষের আগেই এই বীজ ধান পেয়ে আমরা খুবই উপকৃত হলাম। কারণ আমরা কোনদিন এরকম বীজ ধান নিয়ে চাষ করিনি। আশা করছি এই ধান চাষ করলে আমাদের ধানের ফলন ভালো হবে। আমরা অধিক ফসল পাবো!আর সেই ফসল বাজারে বিক্রি করে যেমন দুটি বেশি পয়সা পাবো তেমনি পরিবারের সকলের মুখে সময় মতো দুবেলা দু-মুঠো ভাতও তুলে দিতে পারবো “।
আর এদিন কৃষকদের হাতে বীজ ধান তুলে দেওয়া ঐ কেন্দ্রীয় সংস্থা মূলত সুন্দরবনের তফসিলি জাতিভুক্ত পিছিয়ে পড়া কৃষকদের জীবিকা ও প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নতির মধ্যে দিয়ে তাদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঐ কেন্দ্রীয় পাট এবং সহযোগী তত্ত্ব অনুসন্ধান সংস্থা ICAR -এর ডিরেক্টর ডক্টর গৌরাঙ্গ কর। আর ঐ কেন্দ্রীয় সংস্থার সাথে সুন্দরবনের কৃষকদের সেতু বন্ধনকারী কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটির চেয়ারম্যান তথা বিশিষ্ট সমাজ কর্মী লোকমান মোল্লা বলেন,”আমাদের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে সুন্দরবনের দরিদ্র, অসহায়, অবহেলিত, বঞ্চিত সাধারণ মানুষদের জন্য এরকম অনেক কাজ করে আসছি আজও তেমনি এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল যেখানে পাঁচশো মহিলা চাষী বিনা পয়সায় চাষের জন্য উপযোগী উচ্চ ফলন শীল বীজ ধান পেলেন। আর আপনরা হয়তো জেনে থাকবেন আমরা কেন্দ্রীয় এই সংস্থার সঙ্গে মিলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকার চাষীদের কখনো আধুনিক বীজ বোনার যন্ত্র দিয়েছি কখনো আবার সেই বীজ রক্ষার জন্য তাদের হাতে কীটনাশক তুলে দিয়েছি আবার কখনো বা মাছ চাষীদের হাতে মাছ চাষের জন্য মাছের পোনা,চুন সহ বিভিন্ন সামগ্রি তুলে দিয়েছি। যা সুন্দরবনের কৃষকদের জীবনযাত্রা বদলে দিচ্ছে কারণ সুন্দরবনের চাষীরা এখন সরাসরি তাদের সমস্যার কথা কৃষি বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করছে। তাই আমরা মনে করছি আগামী দিনে সুন্দরবনের কৃষকরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চাষ করে আরও বেশি উপার্জন করতে সম্ভব হবে। আর সেই সঙ্গে সুন্দরবনের চাষিরা আগামী দিনে যাতে আরো এরকম সুবিধা পান সেই চেষ্টা আমরা করবো”।