শতাধিক মৌমাছির কামড়ে গুরুতর আহত কিশোর, ক্যানিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন


শতাধিক মৌমাছির কামড়ে গুরুতর আহত কিশোর, ক্যানিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন


নিজস্ব প্রতিনিধি, বাসন্তীদক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার অন্তর্গত কুলতলি নারায়ণতলা চোরাডাকাতিয়া গ্রামে শনিবার দুপুরে ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটে যায়। সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শতাধিক মৌমাছির হামলায় গুরুতর জখম হয় আদিত্য মন্ডল (১৩) নামের এক কিশোর। বর্তমানে সে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে একাধিক মৌমাছির হুলের চিহ্ন রয়েছে। এমন আকস্মিক ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুর নাগাদ স্কুল শেষে আদিত্য সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল। গ্রামের একটি নির্জন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই তাকে লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি আক্রমণ করে। চারপাশে ঘিরে ধরে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে হুল ফুটাতে শুরু করে। আচমকা এমন আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে কিশোরটি এবং সাইকেল থেকে পড়ে যায়। সে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে চিৎকার করতে থাকে।তার কান্না ও চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা দেখেন, আদিত্যর গায়ে শতাধিক মৌমাছি কামড় বসিয়েছে এবং সে ছটফট করছে। তখনই ঝুঁকি নিয়ে কেউ কাপড় জড়িয়ে, কেউ ধোঁয়া ব্যবহার করে মৌমাছিদের সরিয়ে তাকে কোনোরকমে উদ্ধার করেন। এরপর দ্রুত একটি মোটর বাইকে তুলে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে ১০০টিরও বেশি জায়গায় হুল বিদ্ধ হয়েছে এবং অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন শুরু হয়েছিল।আদিত্যর বাবা মিঠুন মন্ডল জানান, “ছেলে স্কুল শেষে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ মৌমাছির ঝাঁক তাকে ঘিরে ধরে। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি। এখন তার শরীর ফুলে গেছে, ব্যথায় কাতরাচ্ছে।” ঘটনার খবর পেয়ে কুলতলি পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় বন দপ্তরের কিছু কর্মী এলাকাটি পরিদর্শন করেন। তারা জানান, ওই এলাকায় একটি বড় আকারের মৌচাক গাছে ঝুলছিল, যা হয়তো পাথর ছোঁড়া বা শব্দের কারণে বিঘ্নিত হয়। ফলে মৌমাছিরা হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠে। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৌমাছির হুলের বিষ অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।এই ঘটনার পর গ্রামের মানুষজন আতঙ্কিত। ওই রাস্তা দিয়ে স্কুলপড়ুয়া ও সাধারণ মানুষজনের যাতায়াত হয়। তাঁদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব মৌচাকটি নিরাপদভাবে অপসারণ করা হোক। একই সঙ্গে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছে।গ্রামেরই এক প্রবীণ বাসিন্দা জানান, “এখন বর্ষার আগে মৌমাছিরা বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। গাছের নিচে দাঁড়ালে বা শব্দ করলে তারা হামলা করতে পারে। আগে এভাবে কখনও কাউকে মৌমাছির কামড়ে এতটা আহত হতে দেখিনি।”চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আদিত্যর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে।এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও বোঝা গেল, গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান কতটা স্পর্শকাতর। শুধু উন্নয়ন নয়, নিরাপত্তা ও সচেতনতার বিষয়েও নজর দেওয়া প্রয়োজন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন