“হাসপাতাল নয়, যেন সাপের আস্তানা!” — আগাছায় ঢেকে কুলতলির স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আতঙ্কে রোগীরা !
নিজস্ব সংবাদদাতা, কুলতলী : সুন্দরবনের কুলতলিতে রোগী নয়, যেন ভিজে জঙ্গলে প্রবেশ— এমনই ছবি ভুবনেশ্বরী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বর্ষা শুরু হতেই হাসপাতাল চত্বরে পা রাখার উপায় নেই। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে আগাছা, ঝোপঝাড়, লতাপাতা। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষধর সাপ, পোকামাকড়। আতঙ্কে কার্যত ফাঁকা পড়ে রয়েছে হাসপাতাল। চিকিৎসা নয়, যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যেতে হয় এই কেন্দ্রের দরজায়। বাম আমলে গড়ে ওঠা কুলতলির এই ১১ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি লক্ষাধিক মানুষের ভরসার জায়গা। কিশোরী মোহনপুর, মৈপিঠ, বৈকুন্ঠপুর, গুড়গুড়িয়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকা নির্ভরশীল এই কেন্দ্রের উপর। অথচ বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের চূড়ান্ত অভাব, পরিকাঠামো নষ্ট, পরিষেবা প্রায় বন্ধ।
সমাজকর্মী প্রবীর মিশ্র বলেন, “কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছিল এই হাসপাতাল। আজ তা পরিণত হয়েছে একটি পরিত্যক্ত ঝোপঝাড়ে। সাপ, পোকামাকড়ের দাপটে কেউ চিকিৎসা করাতে আসতে সাহস পায় না”। স্থানীয়দের অভিযোগ, জরুরি চিকিৎসার জন্য এখনও ৩০ কিমি দূরে জয়নগর কুলতলী গ্রামীণ হাসপাতালে ছুটতে হয়। দীর্ঘ পথ পেরোতে গিয়ে রক্তাক্ত রোগী মাঝপথেই মারা যান — এমন ঘটনাও ঘটছে বারবার। চিকিৎসকের অভাবে বিকল্প হিসেবে স্থানীয় ‘চেম্বার’-এ গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন বহু রোগী। জঙ্গল থেকে মধু কিংবা মাছ ধরতে গিয়ে আহত হলে, চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু প্রান্তিক মৎস্যজীবী।
এই পরিস্থিতিতে এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি—
🔸 হাসপাতালের চারপাশের ঝোপঝাড় অবিলম্বে সাফ করতে হবে
🔸 স্থায়ীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়োগ করতে হবে কর্মী
🔸 পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিতে হবে এই হাসপাতালে
🔸 বিএমওএইচ-এর পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি এবং তৎপরতা প্রয়োজন
🔸 পরিষেবা চালু রাখতে পঞ্চায়েত ও স্বাস্থ্য দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় জরুরি
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জয়দেব প্রধান জানান, “গত শীতে পঞ্চায়েতের সীমিত ফান্ড থেকে কিছু কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু বিএমওএইচ-এর সহযোগিতা না থাকায় পুরোটা এগোয়নি”। এলাকাবাসী বলছে, “স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকার। আর সেই অধিকারেই যদি ভয় লুকিয়ে থাকে, তবে তা আর অধিকার থাকে না, হয়ে যায় বঞ্চনা।”
এখন দেখার, কবে প্রশাসনের ঘুম ভাঙে, কবে আবার ভরসার মুখ পায় কুলতলির ভুবনেশ্বরী স্বাস্থ্যকেন্দ্র।