নাবালিকা ধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন সহ জরিমানার সাজা ঘোষণা বারুইপুর আদালতের!

নাবালিকা ধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন সহ জরিমানার সাজা ঘোষণা বারুইপুর আদালতের!
নুরসেলিম লস্কর,কুলতলী : এক নাবালিকাকে অপহরণ করে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলীর সানকিজাহানের বাসিন্দা অমর দাস (৩৬)। বারুইপুর পকসো আদালতের বিচারক সুব্রত চ্যাটার্জী তাকে আজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত অমর দাস কে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা এবং নির্যাতিতাকে ক্ষতি পূরণ হিসাবে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডেরও নির্দেশ দেওয়া হয় এদিন। 
    এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত অমর দাস বিবাহিত হলেও বিবাহের কিছু মাস পরেই স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। অভিযোগ, তখন ২০২২ সালে হুগলি জেলার এক ১৪ বছরের নাবালিকাকে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে এনে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে সে। জানা গিয়েছে, মেয়েটি পারিবারিক অশান্তির কারণে ঘর ছেড়ে চলে আসে এবং এক রেলস্টেশনে বসে থাকার সময় অমর দাস তার সঙ্গে আলাপ করে, বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাকে কুলতলীতে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় অমর। পরে নিজের দাদা ও বৌদির বাড়ি পুরীতেও ঐ নাবালিকা কে নিয়ে যায় এবং সেখানেও ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপর আবার কুলতলীতে ফিরে এসেও তাকে লাগাতার নির্যাতন করতে থাকে সে! অভিযুক্তের দিদি ও জামাইবাবুও এই ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠলেও, আদালতে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তারা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। এমনকি মেয়েটিকে কলকাতার বৌবাজারের পতিতাপল্লীতে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল সে, কিন্তু ঐ কিশোরীর বয়স কম হওয়ায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় তার। আর এরই মধ্যে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কুলতলীর বিশিষ্ট সমাজকর্মী শক্তিপদ মন্ডল কুলতলি থানায় ফোন করে পুলিশকে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানান এবং ১ মে ২০২২ তারিখে মামলা দায়ের হয় (কেস নম্বর: ২৫৯/২২)। তদন্তভার পান এসআই শুভময় দাস,যিনি বর্তমানে সিআইডি পশ্চিমবঙ্গ শাখায় কর্মরত। তিনি সেই সময় এই কেসের দায়িত্ব পেয়ে তড়িঘড়ি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এবং ৩০ জুন আদালতে সম্পূর্ণ চার্জশিট পেশ করেন। আড়াই বছর ধরে চলতে থাকা এই বিচার প্রক্রিয়ায় মোট ৭ জন সাক্ষী দেয়।সরকার পক্ষের আইনজীবী অতসী হালদার সাহা মামলায় নাবালিকার হয়ে সওয়াল করেন। পাশাপাশি বারুইপুর জেলা পুলিশের ট্রায়াল মনিটরিং সেলের এসআই জয়ন্ত কুমার দাস মামলার তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
      আর এদিন আড়াই বছরের বিচারপর্ব শেষে অবশেষে সুবিচার পেল হুগলীর ঐ নির্যাতিতা। আর আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কুলতলি এলাকার বাসিন্দারা বলেন,'"এটাই হওয়া উচিত ছিল। এমন অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার। আদালতের রায় দেখে আশার আলো দেখছি আমরা। মেয়েটি অনেক কষ্ট পেয়েছে, আজ তার জন্য ন্যায়বিচারের দিন।" আর সমাজকর্মী শক্তিপদ মণ্ডল, যিনি নিজে থানায় ফোন করে মেয়েটির উদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি বলেন,'‘আইন নিজের পথে চলেছে, আমরা খুশি। এই রায় নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক! যা সমাজে বার্তা দেবে, অন্যায় করলে শাস্তি অবধারিত"।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন