নিট পরীক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য বাসন্তীর মহিনুরের, চিকিৎসক হওয়ার পথে এক ধাপ এগোল দরিদ্র কৃষক পুত্র!
নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : দারিদ্র্য, প্রতিকূলতা, পারিবারিক সংকট—সব কিছুই হার মানল অদম্য মানসিকতার কাছে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ব্লক বাসন্তীর আমঝাড়া গ্রাম -পঞ্চায়েতের ঢুড়ি সাত নম্বর গ্রামের ছেলে মহিনুর খান ২০২৫ সালের নিট (NEET) পরীক্ষায় ৫৩০ নম্বর পেয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। সর্বভারতীয় মেধাতালিকায় তার স্থান ২৫,৬২৪। দরিদ্র কৃষক পরিবারের এই সন্তানের সাফল্য যেন স্বপ্ন ছোঁয়ারই নামান্তর। মহিনুরের বাবা মনাব্বর খান ছিলেন পেশায় কৃষক। মা তানজিলা খান গৃহবধূ। তিন সন্তানের মধ্যে মহিনুর সবচেয়ে ছোট। ২০১৯ সালে পিতৃবিয়োগের পর থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে পরিবার। কিন্তু দুই দাদা ও মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে থেমে যায়নি পড়াশোনা। মাধ্যমিকে ২০২০ সালে ৮৩.১৪ শতাংশ (৫৮২ নম্বর) এবং উচ্চমাধ্যমিকে ২০২২ সালে ৯৪ শতাংশ (৪৭০ নম্বর) নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মহিনুর। এবছর নিট পরীক্ষায় সাফল্যের মধ্য দিয়ে সে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে এক ধাপ এগিয়ে গেল। মহিনুর জানায়, “আমার বাবা ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই আমি লড়াই করে যাচ্ছি। মা ও দুই দাদার অনুপ্রেরণা আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। চিকিৎসক হয়ে আমি গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবা করতে চাই। বাবার স্বপ্নকেই বাস্তবায়িত করতে চাই।” আর ছেলের এমন কৃতিত্বে আবেগঘন মা তানজিলা বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। স্বামীর স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে চিকিৎসক বানাবেন। আজ তিনি বেঁচে নেই, কিন্তু মহিনুর সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগোচ্ছে—এটাই বড় প্রাপ্তি। আমি ওকে বলেছি, যেন ভবিষ্যতে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।” সুন্দরবনের বুক থেকে উঠে আসা মহিনুরের এই সাফল্য প্রমাণ করে, স্বপ্নের কাছে দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়। অদম্য মানসিকতা, পরিবারে ভালোবাসা আর নিরলস পরিশ্রমই পারে জীবনকে নতুন দিশা দেখাতে।