প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা-গদখালী সেতু বন্ধন কবে হবে? প্রশ্ন গোসাবা বাসীর

নুরসেলিম লস্কর,  গোসাবা : আধুনিকতার ছোঁয়ায় একদিকে যখন ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠছে শহর গুলি। মানুষদের আরও সুখ স্বচ্ছন্দ্য দিতে মেট্রো বিদায় জানাচ্ছে নন-এসি রেককে। ঠিক তখন ওই অন্যদিকে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের প্রত্যেক বছর ইয়াস,বুলবুল,আমফান, আয়লার মতো নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে নদী বাঁধ ভেঙে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে। একটা ধাক্কা না সামলাতে, সামলাতে ধেয়ে আসছে আর একটা বিপর্যয়। ভোট আসে সঙ্গে আসে নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট মিটেই তার সঙ্গে মিটে যায় সুন্দরবনবাসীরা হাজারো চাওয়া পাওয়ার দাবিদবা। পুরন হয় না তাদের নিম্নতম দাবি টুকুও। যেমন, কংক্রিটের নদী বাঁধ, নদীর উপর সেতু, ও মিনিমাম স্বাস্থ্য পরিষেবা টুকু। আর এই রকম দাবিদাবাকে তুলে ধরে এবার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী নটি দ্বীপের সাধারণ মানুষদেরকে।গোসাবাবাসীর আক্ষেপ, তাদের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত জয়ন্ত নস্করের প্রচেষ্টায়, বছর চারেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গদখালী গোসাবা ব্রিজ নির্মাণ হবে। জয়ন্ত বাবুর প্রচেষ্টায় সেই কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি ব্রিজ। থমকে গিয়েছে কাজ, মালপত্র একে একে চলে যাচ্ছে কলকাতায়। আর গোসাবা বাসীর  ব্রীজ স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগে তাদের স্বপ্নপূরণের  কারিগর বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর তাদেরকে ছেড়ে পরলোক গমন করেন। জয়ন্ত বাবু থাকলে হয়তো তাদের স্বপ্ন এতো দিনে পূরণ হতো! আর কি এই স্বপ্ন পূরণ হবে? সেই ধোঁয়াশা তেই দিন কাটাচ্ছে তারা।সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই দ্বীপ এলাকার মানুষদের অভিযোগ, নিত্যদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে যেতে হয় কলকাতায়। দিনমজুরের কাজে। রোদ ঝড় জল উপেক্ষা করে। আর কলকাতায় যাওয়ার জন্য তাদের ভরসা এখনো পর্যন্ত নদী পথের নৌকাই। তাই ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় তারা অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তার উপর জেটিঘাট গুলিরও ভগ্নদশা। সেই সঙ্গে তারা আরো অভিযোগ করেন যে, তারা ভেবেছিল বাম জামানায় তো হয়নি এই তৃণমূল সরকার আশায় হয়তো তাদের ভাগ্য কিছুটা হলেও ফিরবে! গোসাবা তে অন্তত সেতু বা কংক্রিটের বাঁধ না হলেও , স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হবে কিছুটা। কিন্তু তাদের সেই আশাতেও বালি। এখনো পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে আসতে হয়, নৌকা পার হয়ে ক্যানিং কিংবা কলকাতায়।আর গোসাবা বাসির এই অভিযোগকে অস্বীকার করে শাসকদলের গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মন্ডল বলেন, ” গোসোবা গদখালী সেতু রুপায়নের কাজ করছে PWD আর এই কাজে অর্থ সাহায্য করছে সুন্দরবন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা SDB। এই কাজ কবে শেষ হবে? সেটা তারা ভালো বলতে পারবে আর আমি যতদূর জানি এই কাজটি থমকে রয়েছে কিছু আইনি জটিলতার কারণে। তবে আশা করছি তাড়াতাড়ি এই কাজ সম্পন্ন হবে। আর গোসাবা তে বাম আমলের পর থেকে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। “শাসক দলের এই যুক্তিকে নশ্চাত করে বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরদার বলেন, ” সেতু থেকে শুরু করে কোন উন্নয়ন রাজ্যে হওয়া সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাসকদলের নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের কাটমানি দিতে দিতে কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার সংস্থা গুলি। তার সঙ্গে রয়েছে এই সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে গোসাবা সহ বিভিন্ন জায়গার উন্নয়ন থমকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন আগামী দিনে গোসবা-গদখালী ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ না হলে আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে যা যা করণীয় বা পদক্ষেপ নেওয়ার তা নেব “।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন