নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী: আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর কুলতলীতে কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আইসিএআর – ক্রিজাফ ব্যারাকপুর এর উদ্যোগে এবং কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটির সহযোগিতায় আয়োজিত হলো এক মেগা “কৃষক সম্মেলন”। আর এদিনের কৃষক সম্মেলন থেকে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সচেতনতা গড়ে তুলে এই পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রে আয় বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন, এদিনের এই কৃষক সম্মেলনে আসা মহিলা,পুরুষ করে প্রায় ৩ হাজার কৃষককে আইসিএআর-ক্রিজাফ ব্যারাকপুর শাখার পক্ষ থেকে বিভিন্ন আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। আর এই আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম গুলির মধ্যে ছিল হুইল জুট উইডার, নাল উইডার, ভার্মি ও কীটনাশক স্প্রে করার মতো আধুনিক স্প্রে মেশিন সহ আট রকম কৃষি সরঞ্জাম। আর এদিন ঐ কৃষি সরঞ্জাম গুলি পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে খুশি সুন্দরবনের কৃষকরা।কারণ, পৃথিবীর বৃহত্তম বদাবন সুন্দরবনে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয় এই কৃষি কাজ করে এবং নদীতে মাছ, কাঁকড়া ও মধু সংগ্রহ করে।
আর এদিনের এই কৃষক সম্মেলনে আসা আইসিএআর-এর বিজ্ঞানীরা সুন্দরবনের কৃষকদের হাতে শুধু আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম তুলে দিলেন না সেই সঙ্গে আগামী দিনে তাদের পাশে থেকে এভাবেই তাদেরকে সমাজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবেন বলে জানান। যেমন, এদিনের এই কৃষক সম্মেলনে সুন্দরবনের কৃষকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আইসিএআর-ক্রিজাফ ব্যারাকপুর শাখার ডিরেক্টর, ডক্টর গৌরাঙ্গ কর বলছিলেন যে, ” সুন্দরবনের কৃষকদের বৈজ্ঞানিকভাবে সফল চাষের জন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে সচেতন এবং ইনপুট প্রয়োজন। যা আগামী দিনে সুন্দরবনের কৃষকদের আইসিএআর কুলতলীতে প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে ধাপে ধাপে দিতে থাকবে এবং তাদেরকে সমাজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে”।আর সেই সঙ্গে এদিনের এই কৃষক সম্মেলন সম্পর্কে কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা তথা সভাপতি,সমাজকর্মী লোকমান মোল্লা বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে সুন্দরবনের কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে এবং কৃষি ক্ষেত্রে এখন যে আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে তাও সুন্দরবনের কৃষকদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কৃষকদের জন্য অনেক যোজনা ঘোষণা করেছে কিন্তূ সুন্দরবনের কৃষকরা এইসব যোজনা ধারে কাছেও যেতে পারছে না। যার ফলে আমরা মানে কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটি আজ কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা আইসিএআর-ক্রিজাফ ব্যারাকপুর শাখা কে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের প্রায় তিন হাজার কৃষককের হাতে আজকের এই কৃষক সম্মেলন থেকে বিভিন্ন আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম তুলে দিলাম।
আর সেই সঙ্গে আজ থেকে আইসিএআর এবং আমরা কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটি একসাথে অঙ্গীকারবদ্ধ সুন্দরবনের কৃষকদের কল্যানে একসাথে কাজ করার জন্যে”। সেই সঙ্গে এদিন সরকার কে হুঁশিয়ারি দিয়ে সমাজ কর্মী লোকমান মোল্লা আরো বলেন যে, আজকের সুন্দরবনের অনেক কৃষকদের কাস্ট সার্টিফিকেট না থাকার ফলে তারা আইসিএআর এর এই সুযোগ-সুবিধা থেকে আজ বঞ্চিত হলো। তাই আমার সরকারের কাছে দাবি, অবিলম্বে সুন্দরবনের সমস্ত কৃষকদের কাস্ট সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে এবং সরকার যদি তা না করে তাহলে আগামী দিনে সুন্দরবনের এই বৃহত্তম কৃষক সমাজকে নিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। আর কৃষি কাজের আধুনিক সরঞ্জাম পাওয়ার পর বীজেপদ স্বর নামের এক কৃষক বলেন, ” কৃষিকাজের জন্য যে এই আধুনিক জিনিসপত্র বা মেশিন পাঠ আছে তা আমরা আগে জানতাম না। আজ কুলতলী মিলন সোসাইটির সহযোগিতায় এবং ব্যারাকপুর আইসিএআর এর ব্যবস্থাপনায় আজকের যে আধুনিক সরঞ্জাম গুলো পেলাম আগামী দিনে তা আমাদের কৃষি কাজে অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠবে বলে মনে হয়। আরে আধুনিক সরঞ্জাম গুলি আমাদেরকে দিয়ে উপকার করার জন্য আমরা কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটি এবং ব্যারাকপুর আইসিএআর কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।