নুরসেলিম লস্কর, সুন্দরবন টিভি : শনিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। আর ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর দিন থেকেই এই মহাদৈরথ নিয়ে পাড়দ চড়ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। যার আঁচ এদিন পাওয়া গেল ম্যাচ শুরুর একদম প্রথমেই। তখন টস করতে মাঠে উপস্থিত দুই দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বাবর আজম। আর রোহিতের কাছে টসে হেরে কথা বলতে আসলে পাক অধিনায়ক কে লক্ষ্য করে ব্যঙ্গাত্মক শিস দিতে থাকে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকা দর্শকরা। তবে টস হারলেও শুরুটা ভালোই করেছিল ওয়াঘা বর্ডারের বাসিন্দারা। একটা সময় ১৫৫ রানে পর্যন্ত মাত্র ২ উইকেট ছিল তাঁদের। কমেন্ট্রি বক্সে তখন আলোচনা চলছিল, ৩০০ রান হওয়াটা সেফ সময়ের অপেক্ষা ? না কি ৩৫০ করে রাখার চেষ্টা করা ভাল হবে পাকিস্তানের পক্ষে। কারণ আগের ম্যাচে পাকিস্তানই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৫০ রান চেজ করে জয় হাসিল করে। মহম্মদ রিজওয়ান দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ম্যাচের নায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরই চমক। বাবর আজম ব্যাক্তিগত পঞ্চাশ রান করার পর মহম্মদ সিরাজের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে যান। আর সেই সঙ্গে পাকিস্তান ব্যাটাররা যেন ভূত দেখার মতো চমকে গিয়ে একের পর এক উইকেট হারান। জসপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজারা সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পরে পাক ব্যাটারদের লেজ মুড়িয়ে দিতে কোনও ভুল চুক করেননি। ভারতের ৫ বোলারই ২টি করে উইকেট নেন। একমাত্র ব্যর্থ শার্দুল ঠাকুর। তাঁর বদলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলালে আরও ৩০-৪০ রান কম করত কি না পাকিস্তান, তা নিয়ে আলোচনা চলুক । তবে ততক্ষন মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
আর ১৯২ রানের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ছন্দ পতন হয় ভারতের। ডেঙ্গু কে পরাজিত করে শনিবার ব্যাট করতে নেমে পয়েন্টে শাহীন আফ্রিদির বলে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন শুভমান গ্রীল । তবে শুরুতেই ভারতের উইকেট নিলেও কিন্তূ পাক বোলার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ আফগানিস্তান ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা এদিন যেন সেখান থেকে শুরু করলেন তিনি। একের পর এক পাক বোলার কে অনাহাসে ছয় চার মারতে থাকেন তিনি। আর এদিন রোহিতের এই মার কাটারি ব্যাটিংয়ের সামনে ধুলার মতো উড়ে গেল পাক বোলাররা। রোহিত করলেন ৬৩ বলে ৮৬ রান। তবে এদিন পাকিস্তানের ত্রাস বিরাট কোহলি মাত্র ১৬ রান করে হাসান আলির বলে নওয়াজের হাতে ক্যাচ তুলে ড্রেসিং রুমের রাস্তা ধরেন । এরপর নামেন শ্রেয়স আইয়ার। তিনি ও রোহিত করেন ৭৭ রানের পার্টনারশিপ। রোহিত আউট হওয়ার পর কেএল রাহুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে জেতান শ্রেয়স। তিনি হাফসেঞ্চুরি করেন। আর এদিন আমেদাবাদের এই ব্যাটিং পিচের ম্যাচে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনে দুর্দান্ত কামব্যাক স্পেল করার সুবাদে এদিন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ভারতের জসপ্রীত বুমরা।
আর ক্রিকেট বিশ্বকাপের মঞ্চে চির-প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে পরাজিত করার রেকর্ড অক্ষুণ্য রাখায় বিরাট রোহিতদের এই জয়ের পর আনন্দে মাতলো সমগ্র ভারত। বাদ গেল না সুন্দরবনও। এদিন শ্রেয়স, বুমরাদের জয়ের পর যেন দেবীপক্ষের সূচনার দিনই শারদীয়ায় আনন্দে মাতলো সুন্দরবনবাসী। কোথাও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় নাচছে যুবকেরা,কোথাও আবার জ্বলছে রং মশাল কিংবা ফুলঝুরি।