নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : আম্ফান, ইয়াস ও বিধ্বংসী আইলার স্মৃতি উস্কে আগামী রবিবার সুন্দরবনে আঘাত হানতে চলেছে আরোএক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! ২০২০ সালের ২০মে আম্ফান ও ২০২১ সালের ২৬মে ইয়াস বিধ্বংসী রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল দুই চব্বিশ পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকায়। আর তার প্রায় বছর দশেক আগে ২০০৯ সালে প্রায় একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলাদেশ উপকূলেও তীব্র গতিতে আছড়ে পড়েছিল ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। আর বছরে বছরে হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় গুলির ধাক্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে শুরু করে প্রাণহানি মতো ঘটনাও ঘটে ছিল সুন্দরবন সহ এরাজ্যে। আর ‘রেমাল’ আসার খবরে সেই আতঙ্ক যেন ফিরে আসছে উপকূলবাসীদের মনে!
আগামী রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলের সুন্দরবন বা সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। বৃহস্পতিবার একথা জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর। তবে ঠিক কোন জায়গা দিয়ে ও কোন সময়ে ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করবে, তা জানানো হয়নি। তবে ‘রেমাল’-এর প্রভাবে রবি ও সোমবার কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার জেরে দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও দমকা হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা আছে। উত্তর ২৪ পরগনাতে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার, কলকাতা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। শনিবার থেকেই অবশ্য এর প্রভাব টের পাওয়া যাবে। যদিও মূলত উপকূলবর্তী এলাকায়। সেদিন পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সঙ্গে ভারী বৃষ্টি। রবিবার ওই তিনটি জেলা ছাড়াও কলকাতা ও হাওড়াতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হতে পারে হুগলি, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে। সোমবার কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, হুগলি ও হাওড়ায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে ওইদিন। সঙ্গে জোরালো ঝোড়ো হাওয়া। তবে কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে সেদিন হাওয়ার গতিবেগ কিছুটা কমতে পারে।কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে এর কেন্দ্রস্থল বা ‘আই’ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে বলে ইঙ্গিত মিলছে। তাহলেও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘুর্ণিঝড়ের বেশ প্রভাব পড়বে বলে দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে এর প্রভাব বেশি হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এদিন সুস্পষ্ট নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এটি উত্তর-পূর্ব অভিমুখে অগ্রসর হয়ে আজ, শুক্রবার মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। শনিবার সকালে আরও শক্তিশালী হয়ে এটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর সেটি অভিমুখ সামান্য পরিবর্তন করবে। উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আরও শক্তিশালী তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ চলে আসবে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলের কাছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে অভিমুখ বজায় রাখলে অনেকটা দূরে বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলের দিকে চলে যেত। এতে দক্ষিণবঙ্গে প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হতো। কিন্তু তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।