সুন্দরবনে বিপদহীন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ! খুশি বনদপ্তর থেকে শুরু করে মৌলেরা

সুন্দরবনে বিপদহীন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ! খুশি বনদপ্তর থেকে শুরু করে মৌলেরা ।




নুরসেলিম লস্কর,সুন্দরবন : শেষ হলো সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ অভিযান। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরের এপ্রিল মাস থেকে সরকারের উদ্যোগে এবং স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যে এই মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া। তবে অনন্যা বছরের তুলনায় এবছরের মধু সংগ্রহের সাফল্য ও স্বস্তির সবচেয়ে বড়ো খবর হলো, এবছরে মৌল্যদের কোনরকম দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর বাঘের হামলা, বুনো প্রাণীর আক্রমণ সহ জলদস্যুদের হাতে প্রাণ যেত মৌলেদের!তবে, এবারের এই রেকর্ড সাফল্যের পিছনে কারণ হিসাবে উঠে আসছে প্রশাসনের বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরে বেশি করে জোর দেওয়া এবং মধু সংগ্রহে যাওয়ার আগে মৌলেদের নিয়ে নানান সচেতনমূলক কর্মসূচির কথা! বন দপ্তর সূত্রে জানাগিয়েছে, এ বছরে মোট ৫৫টি দলকে মধু সংগ্রহের জন্য পারমিট দেওয়া হয়েছিল।প্রতিটি দলে সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে সাত জনের মধ্যে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ দিনের অনুমতি নিয়ে তাঁরা জঙ্গলে প্রবেশ করে এবং তার পর আবার মে মাস পর্যন্ত চলে এই মধু সংগ্রহের কাজ। মৌলেদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল জঙ্গলের কোন কোন অংশে তাঁরা যেতে পারবে এবং কোন অংশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জঙ্গলে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য বন দপ্তরের পেট্রলিং ও চলে এই দুই মাস নিয়মিত। নিরাপত্তার পাশাপাশি মৌলেদের জন্য ইনসিওরেন্স-এর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কেউ আহত হলে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং কারও মৃত্যু হলে পরিবার পাবে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও মৌলেদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল মুখোশ, গ্লাভস সহ  প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। প্রতিটি দলের কাছে ছিল একটি করে রেডিও-র মাধ্যমে তাঁরা আবহাওয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আপডেটও পেয়ে যেত! সেই সঙ্গে মধুর দামও এবারে বাড়ানো হয়েছে। গতবারের তুলনায় কেজি প্রতি ৫ টাকা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বন দপ্তর মনে করছে এতে মৌলেরা কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। এ বারের লক্ষ্য ছিল ১০ টন মধু সংগ্রহের! তবে এখনো পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে তাতে নাকি সেই লক্ষ্য প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছে মৌলেরা! সেই সঙ্গে এবারে শুধু স্থানীয় বাজারে মধু চাহিদা সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও এর চাহিদা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে! ফলে এই সংগ্রহের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বহু মানুষের জীবিকা, আর্থিক স্বনির্ভরতা ও গ্রামীণ অর্থনীতি কে চাঙ্গা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারও এই মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই করে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলেও জানা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এবছরের শান্তিপূর্ণ ও সফল মধু সংগ্রহ অভিযান সুন্দরবনের জীবনযাত্রায় এক ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনছে! আর এই সাফল্যের কারিগর স্থানীয় মৌলেরা জানিয়েছেন,'এবছর বেশ ভালো পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাঁরা। যদিও কিছু এলাকায় ফুল কম থাকায় মধুর উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় খুশি সকলেই। সেই সঙ্গে তাঁরা বনদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে এই মধু সংগ্রহে সাহায্য করবার জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন '।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন