জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিতরণে উচ্ছ্বাস সুন্দরবনের বাসন্তীতে, বিরোধিতার পরেও ব্যাপক সাড়া !

জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিতরণে উচ্ছ্বাস সুন্দরবনের বাসন্তীতে, বিরোধিতার পরেও ব্যাপক সাড়া !

নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো রাজ্যের প্রতিটি ঘরে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তব রূপ নিতে শুরু করেছে। দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যবাসীর কাছে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হবে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হলো সেই প্রসাদ বিতরণ কর্মসূচি। সকাল হতেই বাসন্তীর পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার রেশন দোকানগুলিতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহু দিন পরে এমন একটি উদ্যোগে তারা ধর্মীয় ও সামাজিক দিক থেকে সম্মানিত বোধ করছেন। বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ছিলো ব্যাপক উৎসাহ ও কৌতূহল। প্রসাদ পেয়ে অনেকেই আনন্দে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, এটি যেন প্রতিবছর চালু থাকে।

       আর রেশনে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পেয়ে কাঁঠালবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভাঙ্গনখালি গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা প্রণয় সরকার বলেন, “ছোট থেকেই শুনে এসেছি পুরীতে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এখন নিজের এলাকাতেই সেই জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পেলাম, এটা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি।” তবে এই উদ্যোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে বিতর্কও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “এটা কোনো জগন্নাথ প্রসাদ নয়, রেশন ব্যবস্থার আড়ালে মিষ্টির দোকানের মাল সরবরাহ হচ্ছে। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।” তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের এই প্রসাদ গ্রহণ না করার আবেদনও জানান। কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বিতরণ ঘিরে যে উৎসাহ দেখা গিয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট, শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং, মানুষের মধ্যে এই প্রসাদ পাওয়ার আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো।
        রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, প্রসাদের গুণমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এটি সরবরাহ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে ধর্মীয় ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রসার বলেই ব্যাখ্যা করছেন প্রশাসনিক মহল।আর সামগ্রিকভাবে, রাজ্যের ধর্মীয় আবেগকে কেন্দ্র করে নেওয়া এই উদ্যোগ সুন্দরবনের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় এনে দিয়েছে এক অন্যরকম উৎসবের আমেজ। যদিও রাজনৈতিক বিতর্ক থাকছেই, তবুও মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এই প্রকল্প এখন থেকেই সাফল্যের গল্প বলছে। আর এদিনের রেশনে প্রসাদ বিতরণ সম্পর্কে রেশন ডিলার মতিয়ার রহমান সরদার জানিয়েছেন,'আজকে রেশন দেওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম প্রসাদ নেওয়ার জন্য যেন গ্রাহকদের মধ্যে ছিল এক আলাদা আনন্দ উদ্দীপনা! আর এই প্রসাদ হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাহকরা ছাড়াও সমস্ত ধর্মালম্বী গ্রাহকরা নিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাহকদের মতোই সমান সম্মানের সহিত '।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন