আন্তর্জাতিক বিধবা দিবসে সুন্দরবনের শিবগঞ্জে বিধবাদের মিলনমেলা!
পলাশ তরফদার, বাসন্তী : রাষ্ট্রপুঞ্জ ঘোষিত আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস উপলক্ষে আজ এক বিশেষ মানবিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জে। চম্পা মহিলা সোসাইটি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় দুই শতাধিক বিধবা মা। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই বাঘ বিধবা — অর্থাৎ স্বামীকে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের হামলায় হারানো সংগ্রামী নারী। দিনের সূচনা হয় নীরবতা পালন ও একাত্মতার বার্তায়। এরপর একে একে উঠে আসে হৃদয়বিদারক বাস্তব চিত্র। কেউ বলেন, “স্বামী হারিয়ে অর্ধেক আকাশ হারালাম।” কেউ বলেন, “সন্তান মানুষ করতে প্রাণপাত করছি, কিন্তু নিজের শরীর অচল।” কেউ অসুস্থ, অথচ অর্থাভাবে ওষুধ কিনতেও অক্ষম। কেউ আবার বলেন, “ছেলে, বৌমার সঙ্গে থাকি ঠিকই, কিন্তু দু’মুঠো ভাত পেতে মাথা নিচু করে থাকতে হয়।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেখা নেয়ে, রেনুকা মন্ডল, আকলিমা ঘরামী, অন্নপূর্ণা নস্কর ও আর্জি নস্করের মতো বহু সংগ্রামী বিধবা নারী, যাঁদের জীবনের গল্পে কান্না লুকানো কঠিন হয়ে পড়ে। একজন জানান, “আমি বিধবা হয়েছি, আবার আমার দুই মেয়েও বিধবা হয়ে আমার কাছেই রয়েছে। বাজারে সবজি বিক্রি করেই সংসার চলে।”
এই বিশেষ দিনে চম্পা মহিলা সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রত্যেক বিধবা মায়ের হাতে একটি করে গাছের চারা ও একটি করে বালতি তুলে দেওয়া হয়— প্রতীকীভাবে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নবজীবনের প্রতিশ্রুতি।অনুষ্ঠানের শেষে পরী সরদার নামে এক বিধবা বলেন, “বাবা, আবার ডাকবেতো? বিপদে পড়লে একটু পাশে থাকবেতো?” — এই সরল প্রশ্নে উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে আসে।
আর সাধারণত চুপ করে থাকা এই নারীরা আজকের দিনে নিজেদের মনের কথা প্রকাশের জায়গা পেয়েছিলেন। হাসি-কান্না, যন্ত্রণা-স্বপ্ন ভাগ করে নেওয়ার এই আয়োজনে মানবিকতার ছোঁয়া ছিল অনন্য।