বাংলা বলাই ছিল ‘অপরাধ’ ?মহারাষ্ট্রে ছিন্নভিন্ন বাংলার শ্রমিকের দেহ ।

বাংলা বলাই ছিল ‘অপরাধ’? মহারাষ্ট্রে ছিন্নভিন্ন বাংলার শ্রমিকের দেহ ।

নিজেস্ব প্রতিনিধি, বাদুড়িয়া : বাংলা ভাষার ‘অপরাধে’ এ রাজ্যের মানুষকে ভিনরাজ্যে খুন? তৃণমূলের শহীদ দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির ঠিক পরেই মহারাষ্ট্রে ঘটে গেল এক রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড। নিহত, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার রুদ্রপুর গ্রামের আবুবক্কর মণ্ডল(৩৩)। মহারাষ্ট্রের ভাসি থানার ওয়াসিগাঁও এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত ২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ স্মরণসভা থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের উপর হওয়া হেনস্তার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। আর সেই ঘটনার একদিন আগে, ২০ জুলাই সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান আবুবক্কর।
       পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকে আবুবক্করের মোবাইল ফোন সুইচ অফ থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পরিবার। একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে তারা স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে গত মঙ্গলবার ভাসি শহরের একটি ডোবা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় টুকরো টুকরো করা অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেহ শনাক্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় কফিনবন্দি মৃতদেহ। বুধবার রাতে সেই দেহ ফিরে আসে রুদ্রপুরের পৈতৃক ভিটেয়। রাতেই দাফন সম্পন্ন হয়। গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া, কান্নায় ভেঙে পড়ে মৃতের মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানরা । আর অমানবিকতা ছাপিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে  – কেন এই বর্বরতা ? স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলার শ্রমিকদের প্রতি বাড়তে থাকা বিদ্বেষ এবং বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে আক্রমণ করার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নিহত আবুবক্করের পরিবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে—“এভাবে আর কতো ছেলে হারাব আমরা? বাংলা ভাষা বললেই কি খুন হতে হবে?” তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ওই শোকগ্রস্ত পরিবার ।

        আর মহারাষ্ট্রের ভাসি থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ ইতিমধ্যেই খুনের মামলা রুজু করেছে। স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ, কল ডেটা এবং এলাকাবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড , যার পেছনে জাতিগত বিদ্বেষের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে, একজন পরিশ্রমী শ্রমিক, যে শুধুই জীবিকার খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল, আজ তার ছিন্নভিন্ন দেহ ফিরল কফিনে। এই নৃশংস ঘটনাই যেন বলে দেয়—পরিযায়ী শ্রমিক মানেই এখন জীবনের ঝুঁকি! শুধু ভাষা, পরিচয় আর ভিনরাজ্যের মাটি—এই তিনে জড়িয়ে যাচ্ছে অসংখ্য নিরাপরাধ প্রাণের ভবিষ্যৎ। আর এই ঘটনা পরে তো প্রশ্ন উঠবে —বাংলার মানুষের নিরাপত্তা কি আজও নিশ্চিত নয় দেশের অন্য প্রান্তে ? উত্তর কি মিলবে ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন