ছাত্রবন্ধুর মানবিক স্পর্শে কুঁড়েঘরে ফিরল বেঁচে থাকার আশার আলো !
নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : আশি ঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে বাসন্তী হাই স্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। ভাঙ্গাচড়া বাঁশের খুঁটি আর ছেঁড়া ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঘরটি কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। দেখে মনে হবে আগাছায় ঢাকা যেন একটি স্তূপ! সেই জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে বর্ষার দিন গুলিতে তিনি প্লাস্টিক মাথায় দিয়ে ঘরের এক কোণায় বসে বসে কাটাচ্ছিলেন দিন-রাত। আর এলাকাবাসীর চোখের আড়ালে থাকা এই করুণ বাস্তবতার সাক্ষী হয় প্রত্যন্ত সুন্দরবনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ছাত্রবন্ধু’র সদস্যরা। প্রায় বছর কয়েক আগে এক শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির সময় এই বৃদ্ধার জীবনযাত্রা দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন ছাত্রবন্ধুর সদস্য স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। সেসময়ে তারা কিছু খাদ্য, শীতবস্ত্র এবং ওই ঘরটির কিছু টা মেরামতি করে দিয়েছিলো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘরটি আরও ভেঙে পড়ে। বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে, রাতের পর রাত তিনি নির্ঘুম কাটাছিলেন! কিন্তূ সম্প্রতি এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলার চিকিৎসার জন্য তাকে বাসন্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রবন্ধুর সদস্যরা আবারও খোঁজ নেন ওই বৃদ্ধার। দেখতে পান আগের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন তিনি। তাদের পরে এই কয়েক বছরে আর কেউ তার খোঁজ রাখেনি। আর তাই ওই বৃদ্ধার ওই করুন পরিণতি দেখে আবারো ছাত্র বন্ধুর সদস্যদের কেঁদে ওঠে মন। কিন্তূ তাদের সামর্থ্য যে সীমিত — স্কুল, কলেজের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে তাঁরা করে সমাজসেবা। তাই ঘর নির্মাণের ব্যয় বহন করা সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে। সেই মুহূর্তে ছাত্রবন্ধুর কর্ণধার সুজাউদ্দিন লস্কর বিষয়টি তুলে ধরেন বাসন্তীর প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী সুভাষ নস্করের সামনে। সুভাষবাবুও এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান ছাত্রবন্ধুর সদস্যদের। নিজের সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তাঁদের হাতে। তাঁর এই মানবিক সহযোগিতায় এবং ছাত্রবন্ধুর অদম্য উদ্যোগে শেষমেশ নতুন খুঁটি ও নতুন ত্রিপল দিয়ে ফের বসবাসযোগ্য করে তোলা হয় ওই বৃদ্ধার একমাত্র আশ্রয় — কুঁড়েঘরটিকে। আর এ বিষয়ে সুভাষবাবু সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে না চাইলেও তিনি ছাত্রবন্ধুর সদস্যদের কে বলেন, “বাসন্তীর মানুষ আজও আমার পরিবারের সদস্য। আমি এখন বয়সের কারণে হয়তো আগের মতো খবর রাখতে পারি না। কিন্তু তোমাদের মতো সমাজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মুখে যদি বাসন্তীবাসীর কোনো দুঃখের কথা শুনি,সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। তাই তোমাদের কাছে অনুরোধ বাসন্তীবাসীর কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলো না যেন, কারণ বাসন্তীর মানুষ আমার খুব আপন।” আর সুভাষ বাবুদের মত মানুষের ঐকান্তিক সাহায্য ও ছাত্রবন্ধুর সদস্য সদস্যদের মতো মানুষদের এই মানবিক পদক্ষেপ এবং সমাজসেবার প্রতি দায়বদ্ধতা আবারও প্রমাণ করে দিল — কিছু মানুষের সদিচ্ছা ও সহানুভূতি শুধুমাত্র কারো জীবন বদলে দিতে পারে তাই নয় বদলে দিতে পারে সমগ্র সমাজের প্রতিচ্ছবিতাটাও "! আরে দিনের এই মানবিক উদ্যোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ছাত্র বন্ধুর কর্ণধার সুজাউদ্দিন লস্কর বলেন," প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন স্কুল,কলেজের কিছু ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে আমাদের এই সমাজ সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'ছাত্রবন্ধু',। আমরা সারা বছর বিভিন্ন সময় সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। কখনো কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে হসপিটালে ছড়ছি আবার কখনো শীতের সময় জামে গ্রামে ঘুরে অসহায় দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। কখনো আবার লেখাপড়ার জন্য স্কুলের বই খাতার অভাবে পড়াশোনা বন্ধের মুখে ওরা ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বই খাতার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এরকম এই বৃদ্ধা মায়ের কুঁড়ে ঘরের এই জোরা জন্য অবস্থা দেখে আমরা তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিই যে মানুষ এভাবে কিন্তু বাঁচতে পারে না মানুষকে বাঁচার জন্য অন্য বস্ত্র এবং বাসস্থানের যদি সঠিক বন্দোবস্ত না করা যায় তাহলে একজন সুস্থ মানুষের বেঁচে থাকা বড় কঠিন তাই আমরা তড়িঘড়ি কিভাবে এই বৃদ্ধা মায়ের ঘর থেকে মেরামত করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের রাজ্যের প্রাক্তন শেষ মন্ত্রী তথা আমাদের বাসন্তীর দীর্ঘদিনের বিধায়ক সুভাষ নস্কর মহাশয় কে তিনি আমাদের মুখে এই সমস্যাটির কথা শুনে তিনি তার সাহায্যে হাত আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তার জন্যই আমরা হয়তো আজকের এত তাড়াতাড়ি এই বৃদ্ধা মায়ের কুঁড়েঘরটিকে আবার মেরামত করে তুলতে পারলাম আজকের। সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন,' আপনারা শুনলে আরো খুশি হবেন যে আমরা ছাত্রবন্ধুর তরফ থেকে চেষ্টা করছি এ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের একটি ফ্রিতে এম্বুলেন্স পরিষেবা প্রদান করার জন্য। কারণ বিশেষ করে আমরা যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে হসপিটালে যায় তখন বর্তমানের যাতায়াত খরচ বড্ড বেশি পড়ে যায়। এবং এম্বুলেন্স না থাকার কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোগীকে নিয়ে আমরা সঠিক সময় হসপিটালে পৌঁছাতে পারিনা। তাই অবিলম্বে আমরা একটি এম্বুলেন্স পরিষেবার চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছি।