এক মায়ের নীরব লড়াই শেষ, চলে গেল ছোট্ট জিতু।

এক মায়ের নীরব লড়াই শেষ, চলে গেল ছোট্ট জিতু।

সুন্দরবন টিভি নিউজ ডেক্স, ঝড়খালি : শনিবার সকালে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি গ্রামে নেমে এলো শোকের ছায়া। প্রয়াত স্থানীয় এক বিশেষ কিশোর জিতু, মাত্র ষোল বছরের এক প্রাণবন্ত ছেলে, যে জন্ম থেকে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছে আর তার এই লড়াইয়ে সর্বদা তার সঙ্গী ছিল মা কবিতা দেবী । কিন্তূ শনিবার সকালে হঠাৎ বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয় জিতুর। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

   প্রসঙ্গত, শৈশব জীবনে এক নির্মম আঘাত পেয়েছিল জিতু। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে খেলার মাঠে এক দুর্ঘটনায় ঘাড়ে গুরুত্বর আঘাত পেলে তার শরীরের অধিকাংশ অংশ অচল হয়ে যায়। সেই থেকেই শুরু জিতু ও তার মায়ের সংগ্রাম। কারণ,পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার বাবা সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে প্রাণ হারান। তারপর থেকে কবিতা দেবী একা হাতে জিতু সহ তার এক দিদি ও ভাই কে নিয়ে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আর নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে যখন জিতুর চিকিৎসা করাতে হীমশিম খাচ্ছিলো কবিতা দেবী তখন স্থানীয় কয়েকজন সমাজকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় কয়েক বছর আগে কলকাতায় শুরু হয় জিতুর চিকিৎসা। কিছুটা উন্নতিও হয় তার। নিয়মিত আর্থিক সহায়তা ও যত্নে কিছুটা স্থিতি ফিরে পায় পরিবারটি। তবে ভাগ্য যেন শেষ পর্যন্ত তাদের কে আবারও অন্ধকারে ঠেলে দিল! শনিবার সকালে হঠাৎই ঘটে বিপদ। বাড়ির উঠোনের পাশে পুকুরে পড়ে যায় জিতু। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।আর এভাবেই নিমিষে শেষ হয়ে গেল জিতু ও তার মায়ের ভাগ্যের সাথে অসম এক লড়াই। তবে ভাগ্যের কাছে তারা হেরে গেলেও স্থানীয় মানুষের মনে বিজয়ী জিতু ও তার মা!

  গ্রামের মানুষদের মতে, “জিতু ছিল সবার প্রিয়। তার হাসিটা এমন ছিল, যে কষ্টের মধ্যেও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখত।” আজ সেই হাসি নিভে গেছে, কিন্তু রেখে গেছে এক মায়ের অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি — যা সুন্দরবনের মাটিতে চিরকাল মনে রাখা হবে।শান্তিতে ঘুমাও, ছোট্ট জিতু — তোমার হাসি আমাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন