বাংলাদেশ পরিস্থিতির মধ্যেই ক্যানিং থেকে গ্রেফতার কুখ্যাত জঙ্গি, আজ তোলা হচ্ছে আদালতে!
নুরসেলিম লস্কর, ক্যানিং : অসমের পর এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে গ্রেফতার কাশ্মীরের এক কুখ্যাত জঙ্গি। নাম জাভেদ মুন্সি। জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক উল মুজাহিদ্দিনের সদস্য জাভেদ মুন্সির বাড়ি ভূস্বর্গ তথা জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য কাশ্মীরের তাংপুরায়। উত্তপ্ত বাংলাদেশ পরিস্থিতির মধ্যেই কাশ্মীর পুলিশ ও রাজ্য এসটিএফের যৌথ অভিযানে ক্যানিংয়ের হাসপাতাল মোড় এলাকার গুলশান হাউস নামের একটি বাড়ি থেকে অভিযুক্ত কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকা সূত্রে শোনা যায়, কয়েকদিন আগেই নাকি তার এই জামাইবাবুর বাড়িতে এসেছিলো ঐ অভিযুক্ত যুবক। তদন্তকারীদের দাবি, বহুদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো সে!এমন কি এখান থেকে বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। তবে, আজ তাকে আলিপুর আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমান্ডে কাশ্মীর নিয়ে যাওয়ার হতে পারে বলে সূত্রের খবর!
এবিষয়ে উল্লেখ্য যে , কয়কদিন আগেই অসম পুলিস ৮ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল । এদের মধ্যে ২ জন বাংলার বাসিন্দা। এখন তেহরিক উল মুজাহিদ্দিনের সদস্য জাভেদ মুন্সি কেন বাংলায় এসেছিল? শুধু লুকিয়ে থাকাই তার উদ্দেশ্য ছিল নাকি সে এখানেও নেটওয়ার্ক তৈরির করার চেষ্টা করছিল?সেটাই এখন দেখার। জানা যাচ্ছে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর উপরে একাধিক হামলার সঙ্গে জড়িত এই জাভেদ মুন্সি।এখন বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন ভারতের উত্তর পূর্বের সেভেন সিস্টারস ও কাশ্মীরে জঙ্গদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে বলে সূত্রের খবর। এখন সেরকম কোনও কাজেই জাভেদ ক্যানিংয়ে বাসা বেঁধে ছিল কিনা সেটাও ভাবাচ্ছে পুলিসকে!
এনিয়ে প্রাক্তন এক পুলিস কর্তা বলেন, সীমান্ত অতিক্রম করে জঙ্গিরা বাংলায় ঢুকছে। তারপর তারা কাশ্মীর, কেরালা-সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার জন অরণ্যে মিশে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সীমান্ত রক্ষীদের হাই অ্যালার্টের মধ্যে রাখতে হবে যাতে একটা লোকও যেন বাইরে থেকে দেশে আসতে না পারে। যারা এদেশে ঢুকবে তাদের ধরে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এর সঙ্গে জনগণের স্বার্থ ও সুরক্ষার ব্যাপার জড়িত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গোয়েন্দা সূত্রে খবর পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরালা-সহ একাধিক রাজ্যে জাল বিস্তার করতে জোটবদ্ধ আনসার উল বাংলা টিম- জেমবি। আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের ছাতার তলায় থেকে নতুন ভাবে কাজ শুরু করেছে জেএমবি-এটিবির সদস্যরা। বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সু্যোগে জঙ্গি সংগঠন গুলির নয়া স্ট্রাটেজি উদ্বেগে ভারতীয় গোয়েন্দারা। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের জমানায় যে ভাবে পাকিস্তানে জাহাজগুলোকে খোলা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসার নিয়ম শিথিল করেছে তার রীতিমতো উদ্বেগজনক। কারণ, ২০১৪ সালে গঠিত AQIS-এর ভরকেন্দ্র এবং মূল নিয়ন্ত্রকরা পাকিস্তানে অবস্থিত । ফলে পাকিস্তান থেকে অনায়াসে বাংলাদেশে এবার তারা চলে আসতে পারে এমনকী, এদেশেও অনুপ্রবেশে আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
২০১৪ সালে যখন AQIS তৈরি হয় সে সময় থেকে আলকায়দার অধীন কাজ করতে শুরু করে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন এবিটি। যদিও জেএমবির তখন AQIS যোগ দেয়নি। তাদের নেতারা ছিল আইএসের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের লাগাতার অভিযানে ধরে পড়ে জেএমবি'র বড়বড় মাথারা । যার ফলে অনেকটাই শক্তি হারায় জেএমবি। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, বর্তমানে জেএমবি'র বাকি সদস্যরাও AQIS এর ছাতার তলায় থেকে কাজ শুরু করেছে।এই তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে উদ্বেগজনক,কারণ খাগড়াগড বিস্ফোরণের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ বা এদেশে বাংলাদেশে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ সামনে আসে, তাতে মূলত দেখা যায় এদেশের মাটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে অশান্তি করা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন তাদের উদ্দেশ্য এখানে স্লিপার সেল, মডিউল তৈরি করে ভারতেই অশান্তি বাধানো, নাশকতার পরিকল্পনা করা। খাগড়াগডের সময় ধরা পড়া শিমুলিয়া, মুকিমনগর মাদ্রাসার গুলোর মতো বিভিন্ন খারিজ মাদ্রাসা আড়ালে মগধ ধোলাইয়ের, প্রশিক্ষণের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এমনকী, মহিলাদেরও একভাবে নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর. তাদেরও অস্ত্র প্রশিক্ষণের পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি সীমান্তে বহু মহিলা মাদ্রাসা খোলা হয়েছে কী উদ্দেশ্যে সেটাও খতিয়ে দেখা চলছে। কারা টাকা জুগিয়েছেন? সে গুলোর উপরে কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দাদের নজর রয়েছে। আর ক্যানিংয়ের এই ঘাটনার পর কেন্দ্রকে কিন্তূ নিশানা করতে ছাড়েনি রাজ্যের শাসক দল। যেমন, কেন্দ্র কে নিশানা করে রাজ্যের পুরও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "যেখানে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের, সেখানে সীমান্ত দিয়ে কিভাবে এই জঙ্গিরা দেশে ঢুকছে?।