রেলস্টেশনেই ‘সচেতনতার মঞ্চ’, পথে নামলেন মানবিক বাউল স্বপন দত্ত।
বাইজিদ মন্ডল, ডায়মন্ড হারবার : ডায়মন্ড হারবারের জমজমাট রেলস্টেশন বুধবার এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো। স্টেশনের ব্যস্ত ভিড়ের মধ্যে একতারা কাঁধে, কোল ডুগি হাতে নেচে গেয়ে মানুষের মাঝে ডেঙ্গু সচেতনতায় ব্রতী পূর্ব বর্ধমানের রাষ্ট্রপতি সম্মানিত শিল্পী স্বপন দত্ত বাউল। সারা বছরই সমাজ সচেতনতা, কুসংস্কার দূরীকরণ ও শান্তির বাণী নিয়ে বাউল গানে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী। এবার বর্ষা মৌসুমে বাড়তে থাকা ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষায় পথে নেমেছেন স্বপন দত্ত। বিনা পারিশ্রমিকে, নিঃস্বার্থভাবে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, রেলস্টেশন থেকে গঞ্জে, শহর থেকে মফস্বলে, নিজের লেখা বাউল গানে মানুষকে সচেতন করে চলেছেন।
গানে গানে তিনি বলছেন — “জমা জলই মশার বাসা, ডেকে আনে মৃত্যু নিরাশা।” একইসঙ্গে ব্যাখ্যা করছেন ডেঙ্গুর উপসর্গ — জ্বর, গায়ে ব্যথা, লাল ছোপ, বমিভাব হলে যেন আতঙ্কে না ভুগে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে এলাইজা টেস্ট করানো হয়। আর শুধু মানুষ নয়, তিনি বার্তা দিচ্ছেন প্রশাসনের দিকেও — পৌরসভা, পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্য দপ্তরকে অনুরোধ করছেন নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, মশা মারার স্প্রে এবং ধোঁয়া দেওয়ার কর্মসূচি কার্যকর করার। নির্মাণকারীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, গর্ত করে দীর্ঘদিন জল জমিয়ে রাখা চলবে না। সেই সঙ্গে ফুলদানি, জল ট্যাংক, ঠাকুরের ঘট, প্লাস্টিক প্যাকেট, পরিত্যক্ত টায়ারেও যেন জল না জমে, সে কথাও বারবার বলছেন স্বপন দত্ত। কারণ, ডেঙ্গু প্রতিরোধের একমাত্র উপায় — সচেতনতা।
মানুষের উৎসাহ এবং স্বপন দত্তের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ডায়মন্ড হারবার স্টেশন যেন একদিনের জন্য সচেতনতার মহোৎসবে পরিণত হয়েছিল। ডেঙ্গু মুক্ত সমাজ গঠনে এমন একজন নিঃস্বার্থ শিল্পীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে অনন্য। প্রসঙ্গত,রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইতিপূর্বে তাঁকে তিনবার সম্মানিত করেছেন। 'ডেঙ্গু বিজয়ী বাউল' নামে পরিচিত স্বপন দত্ত সত্যিই এক ব্যতিক্রমী মানবিক মুখ — যিনি গানের মাধ্যমেই সমাজসেবাকে নিজের ধর্ম করে নিয়েছেন।