আর ভিটেমাটি হারানোর ভয় নেই ! ২৫ কোটির স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু গঙ্গাসাগরে । পরিস্থিতি পরিদর্শনে মন্ত্রী ।

আর ভিটেমাটি হারানোর ভয় নেই ! ২৫ কোটির স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু গঙ্গাসাগরে । পরিস্থিতি পরিদর্শনে মন্ত্রী ।
 

সুন্দরবন টিভি নিউজ ডেক্স, গঙ্গাসাগর : সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’ ও ‘ইয়াস’-এর দগদগে ক্ষত আজও বহন করছে সুন্দরবনের বহু গ্রাম। বছরের পর বছর নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে নাজেহাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগর দ্বীপের মানুষ। বিশেষত বঙ্কিমনগর ও সুমতিনগর এলাকার বাসিন্দারা প্রায় প্রতি বছরই নদী বাঁধ ভেঙে ভিটেমাটি ও চাষের জমি হারান। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে স্থায়ী সুরক্ষা দিতেই রাজ্য সরকার নিল এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
 
 
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং সেচ দপ্তরের উদ্যোগে গঙ্গাসাগর অঞ্চলে শুরু হয়েছে ২৫ কোটি টাকার স্থায়ী নদী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এই বাঁধ নির্মিত হলে স্থানীয় মানুষরা নদীভাঙন ও বন্যার হাত থেকে চিরস্থায়ী সুরক্ষা পাবেন বলে আশাবাদী প্রশাসন ও বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের দাবিকে বাস্তব রূপ দিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে উচ্ছ্বাসে ভরপুর গোটা এলাকা। শুক্রবার বঙ্কিমনগরে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী বাঁধের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সেচ দপ্তর ও শিক্ষা দপ্তরের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। মন্ত্রী বাঁধ নির্মাণের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বিস্তারিত বৈঠক করেন।
 

আর এবিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “গঙ্গাসাগরের মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুর্যোগের সঙ্গে লড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী চান, তাঁদের যেন আর কোনোদিন ভাঙনের ভয় পেতে না হয়। এই বাঁধ নির্মিত হলে এলাকাবাসীর জীবন ও জীবিকা উভয়ই সুরক্ষিত হবে।” তবে এই বাঁধ নির্মাণের কাজে কিছুটা বাধা আসে জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে। জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১২টি ঘর সরাতে হবে। অতীতে একাধিকবার নদীগর্ভে জমি হারিয়ে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই প্রথমে নতুন করে জমি দিতে অনীহা দেখান স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। তবে মন্ত্রী নিজে গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন এবং পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের পূর্ণ আশ্বাস দেন। আর এবিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান জানান, “গ্রামবাসীদের ক্ষতি যেন না হয়, সেই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা ও পুনর্বাসনের পথ খুঁজছে।” তবে মন্ত্রীর আশ্বাসে অবশেষে গ্রামবাসীরা জমি দিতে রাজি হন। ফলে এখন কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে। বঙ্কিমনগর এলাকায় নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে উঠছে কংক্রিটের শক্তপোক্ত বাঁধ, যা ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের প্রধান রক্ষাকবচ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি নির্মাণ প্রকল্প নয়, বরং মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ। প্রতিটি ইট বসানো হচ্ছে সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই।” স্থানীয় বাসিন্দা সুবল মণ্ডল জানান, “আমফানে সব হারিয়েছিলাম। এবার যদি সত্যিই এই বাঁধ তৈরি হয়, তাহলে অন্তত নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারব।”
 

আর সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাঁধ তৈরি হলে শুধু গঙ্গাসাগর নয়, আশেপাশের গ্রামগুলিও এর সুফল পাবে। কৃষিজমি রক্ষা, ঘরবাড়ি নিরাপদ রাখা এবং দুর্যোগের সময় প্রাণহানি রোধে এটি হবে একটি “গেম চেঞ্জার প্রকল্প”। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থায়ী মুক্তি দিতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। প্রশাসনের আশা, এই বাঁধ সম্পূর্ণ হলে সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে আসবে এক নতুন অধ্যায়— নদীভাঙনের ভয় নয়, এবার সুরক্ষার বাঁধে ভরসা রাখবে গঙ্গাসাগর তা কিন্তূ নিঃসন্দেহে বলাই যায়!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন