সিপিএমের কৃষক সভার সৌজন্যে কেরলে মৃত সুন্দরবনের পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরলো গ্রামের বাড়িতে ।

সিপিএমের কৃষক সভার সৌজন্যে কেরলে মৃত সুন্দরবনের পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরলো  গ্রামের বাড়িতে ।



নুরসেলিম লস্কর, বাসন্তী : আবারও ভীনরাজ্যে এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসা নিয়ে ব্যাপক চাপান উতোর তৈরী হলো এরাজ্যে। আর এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। তবে, অবশেষে সিপিএম এর কৃষক সভার সৌজন্যে সুন্দরবনের ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ কেরলের কোজিকোডে থেকে বিমানে করে ফিরলো রাজ্যে।  


স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ফুলমালঞ্চ গ্রাম-পঞ্চায়েতের পাণিখালি এলাকার বাসিন্দা আবুবাক্কার লস্কর(৪০)। পেশায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক।পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আবু বাক্কার প্রতিনিয়ত ভীন রাজ্যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পাশাপাশি সেই সমস্ত উপার্জের টাকা কিছুটা সংরক্ষিত করে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করেছিলেন মাথা গোঁজার ঠাই হিসাবে। ইদানিং সেই ঘরের ছাদ ফেলার জন্য গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে কেরলের কোজিকোডে কাজে গিয়েছিলেন।সেখানে গাছ কাটার কাজ করছিলেন। গত ৭ নভেম্বর গাছ কাটার কাজ করার সময় আচমকা গাছ থেকে পড়ে যায় নীচে। ফলে, মাথায় ও কোমরে মারাত্মক ভাবে আঘাত গ্রস্ত হয় সে । তড়িঘড়ি স্থানীয়রা ওই পরিযায়ী শ্রমিক কে উদ্ধার করে  চিকিৎসার জন্য কোজিকোডে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন ১১ নভেম্বর মৃত্যু হয় এই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক আবু বাক্কার লস্করের। এরপর দেহ নিয়ে চলে একপ্রস্থ টানাপোড়েন। তখন, ঐ দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত দেহ কি ভাবে গ্রামে  ফিরবে সেই চিন্তায় ঘুব উবে যায় দরিদ্র পরিবারটির।
 

আর এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের সিপিএম এর প্রাক্তন প্রধান ইয়ুদ আলি সেখ সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ভাবে দেহ টি ফিরিয়ে আনতে বিডিও সহ অন্যান্য প্রশাসনিক স্তরের কর্ম কর্তাদের নজরে আনেন। তবে তাতে কোন সুরাহা না মেলায় ইয়ুদ আলি বাবু তাঁর দলের কমরেড দের বিষয় টি জানানোর পরে রাজ্য ক্ষেতমজুর সংগঠনের সভাপতি তুষার ঘোষের নজরে আসা মাত্রই তিনি যোগাযোগ করেন তাঁর দলের সর্বভারতীয় কৃষক সভার সম্পাদক বিজু কৃষ্ণাণ এঁর সাথে। বুধবার তাঁরই উদ্যোগে বিমানে করে মৃত ঐ পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ আসে কলকাতায়। সেখান থেকে সড়ক পথে এম্বুল্যান্স করে মৃতদেহ পৌঁছায় বাসন্তীর পানিখালী গ্রামে। শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে লস্কর পরিবারের সদস্যরা। বৃহষ্পতিবার রাত আটটা নাগাদ মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়। 


 আর এবিষয়ে বাসন্তীর সিপিএম এর কমরেডরা জানিয়েছেন,  ‘গ্রামের এক দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল কেরলে। মৃতদেহ নিয়ে আসার জন্য সমস্যা তৈরী হয়েছিল।সমাধানের জন্য রাজ্য এবং বাসন্তী ব্লক প্রশাসন কে জানানো হয়। পরে সেবিষয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহনে অনিহা দেখে শেষ পর্যায় দলীয় কর্মকর্তাদের মারফত দেহ বাসন্তীতে নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের হাতে আমাদের দলের তরফে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঐ অসহায় পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে আমাদের জেলা সিটু নেতৃত্ব। ’ অন্যদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে লস্কর পরিবার। সরকারী ভাবে সাহায্যের আশায় চাতকের মতো তাকিয়ে রয়েছেন আবু বাক্কার লস্করের মা,স্ত্রী ও দুই সন্তান !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন