লন্ডন, কানাডা ও বাংলাদেশ থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের শেষ জীবনের ঠিকানা এখন ক্যানিংয়ের ‘চাঁদমুনি আশ্রম’ ।
নুরসেলিম লস্কর, ক্যানিং : বিশ্ব বিখ্যাত সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত ঐতিহাসিক শহর ক্যানিং। একসময় নদী-জঙ্গল আর ম্যানগ্রোভের জন্য পরিচিত এই এলাকা আজ নতুন করে বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। কারণ, লন্ডন, কানাডা ও বাংলাদেশসহ বিদেশের নানা প্রান্তের বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখন তাঁদের শেষ জীবন কাটাতে চাইছেন ক্যানিংয়ের ম্যানগ্রোভ বন ভূমির বুকে গড়ে ওঠা ‘চাঁদমুনি বৃদ্ধাশ্রমে’।
নুরসেলিম লস্কর, ক্যানিং : বিশ্ব বিখ্যাত সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত ঐতিহাসিক শহর ক্যানিং। একসময় নদী-জঙ্গল আর ম্যানগ্রোভের জন্য পরিচিত এই এলাকা আজ নতুন করে বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। কারণ, লন্ডন, কানাডা ও বাংলাদেশসহ বিদেশের নানা প্রান্তের বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখন তাঁদের শেষ জীবন কাটাতে চাইছেন ক্যানিংয়ের ম্যানগ্রোভ বন ভূমির বুকে গড়ে ওঠা ‘চাঁদমুনি বৃদ্ধাশ্রমে’।
জানা গিয়েছে, ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাস ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন। সেই শোক ও অভাব তাঁকে সমাজসেবায় অনুপ্রাণিত করে। পিতৃ-মাতৃহারা হওয়ার যন্ত্রণা থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন—কোনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যেন জীবনের শেষ প্রান্তে একাকিত্ব বা অবহেলার শিকার না হন। সেই ভাবনা থেকেই কয়েক বছর আগে বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতায় লর্ড ক্যানিংয়ের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলেন ‘ক্যানিং চাঁদমুনি বৃদ্ধাশ্রম’। এই আশ্রমটি আজ শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও পরিচিতি পেয়েছে। আশ্রমে স্থান পেয়েছেন অসহায়, নিপীড়িত ও পরিত্যক্ত প্রবীণরা—যাঁদের জীবন পরেশ রাম দাস ও তাঁর সহযোগীরা নতুন আলোয় ভরিয়ে তুলেছেন। আবাসিকদের জন্য এখানে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা—যেন পাঁচতারা হোটেলের আতিথেয়তাও ম্লান হয়ে যায়। প্রতিদিনের যত্ন, নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, পুষ্টিকর আহার, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সবই তাদের জন্য নির্ধারিত। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জন্মদিন, নববর্ষসহ নানা উৎসবও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পালিত হয় এই আশ্রমে। ফলে এখানে থাকা প্রবীণরা যেমন মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, তেমনই পান এক নতুন পারিবারিক পরিমণ্ডল। সম্প্রতি আশ্রমের ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই বিদেশের বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আশ্রমে যোগাযোগ শুরু করেন। লন্ডন, কানাডা ও বাংলাদেশের একাধিক পরিবার ফোন করে আবেদন জানিয়েছেন—তাঁরা তাঁদের শেষ জীবন কাটাতে চান এই আশ্রমে।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিদেশি আবেদনকারীদের অনুরোধ ইতিমধ্যে নথিভুক্ত করা হচ্ছে।আর এই আশ্রমের জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাসকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন সকলে। তাঁর উদ্যোগে ক্যানিং আজ কেবল রাজ্য নয়, আন্তর্জাতিক দরবারেও পরিচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাঁর প্রচেষ্টাতেই ‘ক্যানিং এমএলএ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে’ বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল ক্যানিংকে। আবার ‘ক্যানিং এমএলএ গোল্ড ম্যারাথন দৌড়’-এ ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনা থেকে সাতজন দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন—যা ক্যানিংয়ের পরিচিতিকে আরও উজ্জ্বল করে।আর এবার সেই ক্যানিংয়ের ‘চাঁদমুনি বৃদ্ধাশ্রমে' বিদেশি প্রবীণদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠায়, ক্যানিংয়ের মুকুটে যুক্ত হল আরও একটি আন্তর্জাতিক পালক। যা সমাজসেবার এই অনন্য দৃষ্টান্ত আজ প্রমাণ করছে—মানুষের ভালোবাসা, সেবা আর মানবিকতার সীমা কোনও দেশের সীমানায় বাঁধা নয়। তাই তো ক্যানিং আজ কেবল সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার নয়—এখন সে মানবিকতার আন্তর্জাতিক দরজা হিসাবে নিজে কে মেলে ধরেছে বিশ্ব দরবারে।


